কেরলে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর প্রথম ‘মেরিন সিমেট্রি’। অর্থাৎ জলে ভাসমান সমাধি ক্ষেত্র। কিন্তু এই সমাধিক্ষেত্রটি কোনও বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্য নয়। এটি জলজ প্রাণীদের জন্য।
বাস্তুতন্ত্রে জলজ প্রাণীদের জীবন সব সময়ই উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে সমুদ্রতলে। অস্তিত্বের সংকটে বহু জলজ জীব।
সেদিকে নজর দিতেই এক পরিবেশপ্রেমী সংস্থা কেরালার চালিয়ার নদীর বেপর বিচের কোঝিকোড়ে এই সমাধিক্ষত্রটি গড়ে তুলেছে।
সিন্ধুঘোটক, প্যারট ফিশ, হ্যামারহেড শার্ক, লেদার ব্যাক টার্টেল, ডুগং, শ’ফিশ, ঈগল রে, জেব্রা শার্ক এবং মিস কেরালা এই নয় বিপন্ন জীবের জন্য বিশেষ ধরনের সমাধি ফলক তৈরি করা হয়েছে। ‘মিস কেরালা’ নদীর জলের মাছ।
সমাধি ফলক সাধারনত যেমন দেখতে হয় এগুলি তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। কাদা-মাটি বা সিমেন্ট দিয়ে নয়, লোহার ফ্রেমে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি। প্লাস্টিকের বোতলের কারণে জলজ জীবরা কতটা বিপন্নতার মুখে পড়ছে প্রতিদিন তা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে এভাবে সমাধি ক্ষেত্র তৈরির ভাবনাকে বাস্তবায়িত করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবী জুড়ে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬.৪ মিলিয়ান প্লাস্টিক বোতল সমুদ্রে মেশে। প্রত্যেকদিন গড়ে প্রায় ২৬ হাজার। যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে গোটা বিশ্বের বাস্তুতন্ত্রকেই ক্রমশ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সিটেসিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা গ্রিসের সমুদ্রে স্পার্ম হোয়েল প্রজাতির মৃত তিমির প্রায় প্রত্যেকের পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক পেয়েছেন। গত জানুয়ারিতে একইভাবে উত্তর সাগরের তীরে এসে মারা যাওয়া ২৯টি তিমির পেটেও পাওয়া গিয়েছিল দলা পাকানো বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো।
৭০০-র বেশি সামুদ্রিক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। নেপথ্যে প্লাস্টিক আর জল দূষণ।
কেরলের পরিবেশ কর্মী আকাশ রানিসনের নেতৃত্বে ‘ক্লিন বিচ মিশন’ ক্যাম্পেইন-এর অঙ্গ হিসেবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
আকাশ রানিসন জানিয়েছেন, ‘কেরল নদীমাতৃক রাজ্য। জীবন- জীবিকার জন্য এখানকার মানুষ ভীষণভাবে নদী সমুদ্রের ওপর নির্ভর করে। অন্যতম অর্থকরী অবলম্বন মাছ। তাই সমুদ্রের সংকট সম্বন্ধে সচেতন করাটা খুব জরুরী।
সমুদ্র যে নিজেই বিপন্ন এই সমাধি মানুষকে বারবার মনে করিয়ে দেবে সে কথা’।
এই সমাধি ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় ফলকটি ‘মিস কেরালা’র। সমুদ্রের নোনা জল নয়, যেটি নদীর মিষ্টি জলের মাছ। সমুদ্রের সঙ্গে সঙ্গে নদী এবং শাখানদীতেও বাহিত হচ্ছে দূষণ। কোনও জলতলই আজ আর বিপদমুক্ত নয়।