জল'ই আমাদের জীবন, একথা শুধুমাত্র ছোটদের পাঠ্য বইয়ের নীতিকথা নয় বরং জীবনযাপনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন দিক, তা আমরা সকলেই জানি। পরিশ্রুত জলের গুরুত্ব, শৌচালয়ে জলের প্রয়োজনীয়তা, জলের সুরক্ষা, প্রভৃতি জলকেন্দ্রীক বিভিন্ন বিষয়ের তাৎপর্য বোঝাতেই প্রতিবছর ২২ মার্চ তারিখে পালিত হয় 'বিশ্ব জল দিবস'।
১৯৯৩ সালে প্রথমবার বিশ্ব জল দিবস পালন করা হয়। এবছরে বিশ্ব জল দিবসে জাতিপুঞ্জের থিম- "কেউ এড়াতে পারবেন না", অর্থাৎ জলের ব্যবহার, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কেউই এড়িয়ে জেতে পারবেন না। তবে জলের গুরুত্ব বুঝতে হলে এই সম্পর্কে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা দরকার। 'জল দিবস'-এ রইল তেমনই কিছু অজানা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
মাত্র ১ শতাংশ জল পানীয়যোগ্য-
দেখা গিয়েছে, পৃথিবীর মোট জলের ৯৭ শতাংশ হল সমুদ্রের নোনা জল। ফলে তা পানীয়যোগ্য নয়। বাকী তিন শতাংশের মধ্যে ২ শতাংশ বরফ হয়ে হিমবাহ বা অন্য জায়গায় জমে রয়েছে। ফলে সারা পৃথিবীর মানুষের ব্যবহারের জন্য রয়েছে শুধুমাত্র ১ শতাংশ জল।
ব্যবহারযোগ্য জলের ঘাটতি-
আমরা প্রত্যেকেই জানি পৃথিবীর মোট তিন ভাগ জল ও একভাগ স্থল। তবে সেই জলের কতটা ব্যবহারযোগ্য তা আমরা অনেকেই জানি না। ফলে নদী, খাল, বিল, সাগর, সমুদ্রে প্রচুর জল থাকলেও, মনে রাখতে হবে তার সমস্তটা ব্যবহারযোগ্য নয়, ফলে জল সুরক্ষা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব।
৬৬ কোটির বেশি মানুষের জলের অভাব
দু'বছর আগে পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬৬.৩ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে ভুক্তভোগী, এত সংখ্যক মানুষের বাসস্থানের কাছাকাছি পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই।
প্রশান্ত সাগরেই রয়েছে অর্ধেক জল
অ্যাটলান্টিক মহাসাগর সারা পৃথিবীর মোট সামুদ্রিক জলের ২৩ শতাংশ ধারণ করে রেখেছে। এদিকে প্রশান্ত মহাসাগরে মোট জলের ৪৮ শতাংশ রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের চেয়ে এক চা চামচ জলে বেশি অনু রয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
কোটি কোটি মানুষ দূষিত জল পান করে
সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ উন্নত শৌচাগারের সুবিধা ভোগ করেন না। ফলে তাদের জলকষ্ট রয়েছে তা আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না। এছাড়া কোটি কোটি মানুষ দূষিত জল পান করে বেঁচে রয়েছেন। ফলে ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগের প্রকোপ এখনও মারাত্মক ভাবে দেখা যায়।
নোংরা জল ব্যবহার করে লাখো মানুষের মৃত্যু প্রতিবছর
নোংরা জল ব্যবহার করে ও শৌচাগারের অভাবে সারা বিশ্বে ৮ লক্ষ ৪২ হাজার মানুষ মারা যান। সারা বিশ্বে বিশুদ্ধ জল ও শৌচাগারের ব্যবহার সঠিক হলে মোট রোগ ৯.১ শতাংশ হারে কমবে। এবং সবমিলিয়ে মৃত্যুর হার ৬.৩ শতাংশ হারে কমতে পারে।
নদীর চেয়ে পরিবেশে জল বেশি রয়েছে
সারা পৃথিবীতে সমস্ত নদী মিলিয়ে যে পরিমাণ জল রয়েছে তার চেয়ে বেশি জল মজুত রয়েছে পরিবেশে, হাওয়ায়। যদি পরিবেশে মিশে থাকা সমস্ত জলকণা একসঙ্গে বৃষ্টি আকারে ঝরে পড়ে তাহলে পৃথিবীর সমস্ত জায়গা গড়ে এক ইঞ্চি জলে ডুবে যাবে।
জলের অপচয়
একটি সাধারণ নল দিয়ে মিনিটে ২ গ্যালন করে জল বের হয়। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করার সময়ে কলের মুখ বন্ধ করে রাখলে ফি দিন আপনি চার গ্যালন করে জল বাঁচাতে পারেন। এমনকী বিভিন্ন পাবলিক টয়লেটে দিনে গড়ে ২০০ গ্যালন করে জল নষ্ট হয় বলেও দেখা গিয়েছে।
জল অপচয়ে ১ নম্বরে রয়েছে আমেরিকা
জল খরচে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবাসী। প্রতিদিন একজন আমেরিকাবাসী গড়ে ১০০ গ্যালন জল ব্যবহার করে। সেখানে ইউরোপীয়রা গড়ে ৫০ গ্যালন, সাব সাহারন আফ্রিকার বাসিন্দারা মাত্র ২-৫ গ্যালন জল জনপ্রতি ব্যবহার করতে পারেন।
জল জোগাড়ে এগিয়ে মেয়েরা
ভারতের মতো অন্য উন্নয়নশীল দেশে মূলত মহিলা বা মেয়েরা জল জোগাড়ের কাজ করেন। সারাদিনের এক চতুর্থাংশ সময়ই এই কাজে অতিবাহিত করেন তাঁরা।
পরিশেষে, কতগুলি মজার তথ্য
একটি উঁট ১০ মিনিটে ৩৫ গ্যালন জল পান করতে পারে। উঁট বহুদিন জল না খেয়ে বাঁচতে পারে বলে জানা যায়। তবে কিছু ইঁদুরের প্রজাতি রয়েছে যারা উঁটের চেয়েও বেশিদিন জল না খেয়ে বাঁচতে পারে। রঙীন মাছের মধ্যে জনপ্রিয় গোল্ডফিস নিয়ে গবেষণায় অভিনব তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, গরম জলের চেয়ে ঠান্ডা জলে এই মাছের স্মৃতি বেশি ভালো থাকে।