বিশ্ব জল দিবস

মাথার ওপর সূর্য। ধূ-ধূ বালি। জন মানুষ দেখা যায় না। তার ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছে জনা কয়েক মহিলা। মাথার ওপর ধাতুর কলস। হাতে জলপাত্র। এভাবেই হেঁটে যান ওঁরা। মাইলের পর মাইল। গাঁ থেকে গাঁয়ে। ভারতের মরু অঞ্চলের এ অতি পরিচিত দৃশ্য। মরু থরের এই দৃশ্যে অনেকেই আগে চমকাতেন না। মরু অঞ্চলে জলের অভাব। এভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে জীবন চলে মরুপ্রদেশের মানুষগুলোর।

কিন্তু এই দৃশ্য যদি ছড়িয়ে পড়ে ভৌগলিক পরিধির সীমা অতিক্রম করে তখন আতঙ্ক জাগে। জলাভাবের এই দৃশ্য  ঘনিয়ে ওঠে গরম পড়লে। গ্রাম থেকে শহরে। ফুটপাত থেকে আবাসন সব জায়গায়। দাম বাড়ে জলের। যত গরম, যত জলাভাব, ততই যেন সোনার মতো বেড়ে চলে দাম।  ঘরের নল যে শুকিয়ে খটখট

পরিস্থিতির গুরুত্ব মানুষ বুঝুক, না বুঝুক, দেশের আসল জলচিত্রটা কিন্তু এমনই। গোটা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ ভারতের। বিশ্বের মোট জলসম্পদের ৪ শতাংশ এদেশের। ২০১৯ সালে নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতকে ইতিহাসের তীব্রতম জল সংকটের মুখে পড়তে হয়েছিল। বেঙ্গালুরু, দিল্লি, হায়দরাবাদ, চেন্নাইয়ের মতো শহরগুলো ২০২১ থেকেই জলের তীব্র আকালের মুখে পড়তে পারে বলে অনুমান করা হয়েছিল এ রিপোর্টে।

২০০৭ থেকে ২০১৭ এই এক দশকে মাটিতে সঞ্চিত জলের স্তরও নেমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এ দেশের কৃষি এবং পানীয় জলের ক্ষেত্রে মাটিতে সঞ্চিত জলের ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল। বদলে যাওয়া জল পরিস্থিতির জন্য অনেকটাই দায়ী জলবায়ু। জল সঙ্কট থেকে বাঁচতে ভারতে একাধিক প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্পের সুফল পেতে সচেতন হতে হবে মানুষকে।      

রান্নাঘর থেকে কলঘর ট্যাপ খুললেই ঠাণ্ডা বারি ধারা। কল খুললেই জল। কিন্তু একদিন বা কয়েক ঘন্টা জল যদি কল থেকে নিখোঁজ থাকে তাহলেই ত্রাহি ত্রাহি রব...আগামীর ত্রাহি রব থেকে মানুষকে সচেতন করতেই ২২ মার্চ অর্থাৎ আজকের দিনটিকে জাতি সংঘের সাধারণ সভা বিশ্ব জল দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 

যত রুক্ষ হচ্ছে পৃথিবীর মাটি, তত নামছে জলস্তর। জলের জন্য হাহাকারের ছবিটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে দেশে দেশে। সময়ে গুরুত্ব না বুঝলে সংকটে পড়বে সভ্যতা। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) এজেন্ডা ২১-এ প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়।

১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালিত হয় এবং তারপর থেকে এই দিনটির গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০৩০ সালের মধ্যেই জল এবং জলের ব্যবহারে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠা...Water and sanitation for all by 2030। এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে পৃথিবীকে সুজলা সুফলা করে রাখতে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...