‘না’ নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তাই না দেখে ভোঁদড় নাচে
ওরে ভোঁদড় ফিরে চা
খোকার নাচন দেখে যা।
ছোটবেলায় ছড়ার বইয়ের পাতা থেকে বড় হয়ে মোবাইল স্ক্রিনে ছটফটে দস্যি এই জলজ প্রাণী মন কেড়ে নেয়। সবসময় ট্রেন্ডে ইন। ইংরেজিতে বলে ওটারস। বাংলায় ভোঁদড় বা উদবিড়াল। এছাড়াও আছে অন্য অনেক নাম। ধেড়ে, উদ, উদবিলাই, উদবিড়াল, মাছ নেউল ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম- Lutrogale perspicillata
এই প্রাণীটি জল এবং স্থল দুই স্থানেই দেখা যায়। উভচর প্রাণী।
বেশিরভাগ জলাশয়ের ধারে গর্ত করে বাস। সামুদ্রিক ভোঁদড়রা সমুদ্রেই বেশিরভাগ সময় কাটায়। উঁচুতে কোনো বড় গাছের তলায় গর্ত করে থাকে ওরা।শিকারের প্রয়োজন হলে তবেই জলে নামে।
এরা খুব ভালো সাঁতার পারে। এক ডুব দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার যেতে পারে। ধারালো দাঁত দিয়ে মাছ শিকারে এদের জুড়ি নেই। মাছ এদের প্রধান আহার হলেও কাঁকড়া, ব্যাং পেলেও ছাড়ে না।
ভোঁদড়ের শরীর কালচে বাদামি ঘন লোমে ঢাকা। মাথা ও শরীরের মাপ ৬৫-৭৫ সে.মি.। গলার দিকে সাদা । লেজ ৪০-৪৫ সে.মি. চ্যাপ্টা। ফলে সাঁতারে বেশ সুবিধা হয় । কান ছোট। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মত চ্যাপ্টা । স্ত্রী ভোঁদড় প্রতি বছরে একবার তিন থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। এরা বেঁচে থাকে প্রায় ২০ বছর। ভোঁদড়ের গায়ে একপ্রকার গন্ধ রয়েছে। কেউ কেউ এ গন্ধকে বাঘের গন্ধ বলেও ভুল করে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরার প্রথা প্রচলিত ছিল। বহু বছরের প্রাচীন এই প্রথা। তবে বর্তমানে খুব কম দেখা যায়।
পূর্ববঙ্গের নড়াইল সদর উপজেলার গোয়াইলবাড়ি, পংকবিলা ও রতডাঙ্গা গ্রামে আজও জেলেদের ভোঁদড় দেখা যায়। জেলেরা নৌকা থেকে রশি ধরে রাখেন আর পোষা ভোঁদড় মাছদের তাড়া করে জেলেদের জালে আনে। বিনিময়ে মাছ পায়। বর্ষা আর শীতকালই মূলত ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা হয়।
ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুরে ভোঁদড়ের দেখা মিলে।
বর্তমানে ভোঁদড়ের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এই প্রাণীটির বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের বিষয়ে মানুষকে সচেতন কর তুলতে প্রতিবছর মে মাসের শেষ বুধবার দিনটি World Otter Day হিসেবে পালিত হয়। দিনটির ২০২৪ সালের থিম Educate Yourself and Others