চরিত্র বদলে পরিষ্কার জমা জলেও ডিম পাড়ছে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বাহক মশা

পৃথিবী এখন ‘ম্যালেরিয়া মুক্ত হওয়ার সময়’। বলছে এবারের ম্যালেরিয়া দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্তা অনুযায়ী ২০২৩ সালের বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসের থিম ম্যালেরিয়া মুক্ত পৃথিবী। প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে আজকের  দিনটি ম্যালেরিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। ম্যালেরিয়ার রোগ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতেই আজকের দিনটি পালিত হয়। ম্যালেরিয়া পৃথিবীর অন্যতম পুরনো ব্যাধি।  প্রতি বছর এখনও বিশ্বের ২০ কোটির বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকেন, বেশির ভাগ সময় যার শিকার হয় শিশু ও বৃদ্ধরা। বিশেষ করে আফ্রিকায় এখনো এক বিরাট আতংকের নাম ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়াতে গোটা পৃথিবীতে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যায়, তার অর্ধেকই মারা যায় আফ্রিকা অঞ্চলের পাঁচটি দেশে।

প্ল্যাসমোডিয়াম নামে এক ধরণের পরজীবীর সংক্রমণে ম্যালেরিয়া হয়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে এই রোগ হয়। যা তার লালা মাধ্যমে প্রোটিস্টর সংবহন তন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে এবং শেষে যকৃতেতে পৌঁছায়, যেখানে তারা পরিপক্ব হয় এবং বংশবৃদ্ধি করে। ম্যালেরিয়ার সাধারণ রোগের লক্ষণসমূহ হল জ্বর এবং মাথাব্যাথা, যা খুব গুরুতর ক্ষেত্রে কোমা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আক্রান্ত হলে তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা এবং কাঁপুনি হয় একজন মানুষের। ম্যালেরিয়ার পরজীবী লিভার ও লোহিত রক্ত কণিকার কোষ আক্রমণ করে।

কিডনি, লিভার এবং হৃদযন্ত্র মানব শরীরের তিন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেই মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া থেকে রক্তশূন্যতা হতে পারে এবং আক্রান্ত হতে পারে মস্তিষ্কও।

২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড কার্ডিওলজি কনফারেন্সে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ম্যালেরিয়ার জেরে রক্তচাপের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যহত হয়। যা হাইপারটেনশনের কারণ।  

ম্যালেরিয়া জীবানুর বাহক মশা চরিত্র বদল করেছে বহুবার। আগে মনে করা হত শুধুমাত্র নোংরা জমা জলেই এই মশা ডিম পাড়ে ও জন্ম হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ম্যালেরিয়ার মশা পরিষ্কার জলেও বংশ বৃদ্ধি করে।

আদৌ কোনওদিন পৃথিবী ম্যালেরিয়ামুক্ত হওয়া সম্ভব? আশা দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।  বিশ্বের ৪১ জন শীর্ষস্থানীয় ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ দল, যে দলে বিজ্ঞানী থেকে অর্থনীতিবিদও  রয়েছেন, তাঁদের মতে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল সম্ভব। অতীতে এই সম্ভাবনা স্বপ্ন বলে মনে হলেও এখন কিন্তু তাঁদের কাছে তা ঘোর বাস্তব। ১৯৮০ সালে কেবলমাত্র গুটিবসন্ত রোগকে পৃথিবী থেকে চিরকালের মত বিদায় হয়েছে বলে ঘোষণা করা হইয়েছিল। যেভাবে পোলিওমুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে টিকা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেই কর্মদ্যোগেও এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...