সহমর্মিতার মত নরম অনুভূতি দীর্ঘায়ু করে মানুষকে

এক গবেষক গবেষণা করছেন একটা আশ্চর্য বিষয় নিয়ে। তাঁর গবেষণার বিষয় কীভাবে দয়া ও সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে মানুষকে আরও দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষকের নাম মিস্টার ফেসলার।

তাঁর গবেষণার বিষয়ে আশ্চর্য করেছিল তাঁর পিএইচডির গাইড কে। দয়া, সহমর্মিতা, ভালোবাসা এগুলো তো মানুষের সহজাত অনুভূতি। এইসব অনুভূতির উদযাপন বড় দৃষ্টিকটু। এমন কথাই ফেসলারকে বলেছিলেন তাঁর গাইড। সেই গাইড এটাও বিশ্বাস করতেন এই সব অনুভূতির উদযাপন অপ্রয়োজনীয়।

কিন্তু ফেসলার একটি বিশেষ সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন, এখনো সহানুভূতির মত অনুভূতি অনুরোধ করে পেতে হয়। এটা আসলে মানবতার ব্যর্থতা।

এই গবেষকের গবেষণার বিষয় শুনে অনেকে ঠাট্টাও করেছিলেন। কিন্তু গবেষক তাঁর পছন্দ করা বিষয় নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। নিজের গবেষণা সম্পূর্ণ করে তিনি মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা, সহানুভূতি এসব অনুভূতি ছড়িয়ে দিতে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।

তবে এই প্রতিষ্ঠানে নেহ াত ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা দেওয়া বা ভালো কাজ করার উৎসাহ দেওয়া বাদ দিয়েও এই ধরনের অনুভূতির বৈজ্ঞানিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

ড্যানিয়েল ফেসলার বলেছিলেন "আমরা বিষয়টির বৈজ্ঞানিক দিকটি দেখতে চাই, আমরা এর মনস্তত্ত্ব শরীরবিদ্যা এবং ইতিবাচক সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি।"

আসলে ড্যানিয়েল ফেসলার জানিয়েছিলেন এক বৃদ্ধা এলিজা কামিংস-এর মৃত্যুর পর এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেই মৃত্যু ছিল মর্মান্তিক অথচ মৃত্যুর সময় কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।

ফেসলার তার গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন শক্ত মানসিকতার বা শক্তিশালী মানুষ হওয়ার জন্য দয়ালু হতে হয়।

এক জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক বলেছেন "দয়ালু হওয়া মানে নিজের মতের সঙ্গে যার মিলবে তার প্রতি দয়ালু হওয়া নয়, দয়ালু মানে সবার প্রতি দয়া বা সহানুভূতিশীল হওয়া।"

গবেষকদের মতে এটা জীবন-মৃত্যুর মতোই জরুরি বিষয়।

ফেসলার আরো বলেছেন "আমরা এখন নির্দয় একটা সময় বাস করি, সমগ্র বিশ্বজুড়ে ব্যক্তি পর্যায়ে এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে ক্রমাগত সংঘাত বাড়ছে। এমন সময় বিশ্ব সহমর্মিতা দিবসের মত দিবস পালন প্রয়োজনীয়।"

তার মতে দয়ামায়ার বিষয়ে মূলত একটি ভাবনা, একটি অনুভূতি এবং একটি বিশ্বাস। এই অনুভূতিটি অন্যের ভালো করার সঙ্গে সম্পর্কিত।

ফেসলারের প্রতিষ্ঠানটি কাইন্ডনেস ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। যেকোনো কাউকে সাহায্য করা এবং এই কাজের জন্য নতুন নেতা তৈরি করাই এই ইনস্টিটিউট-এর প্রধান উদ্দেশ্য। এর সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটে বিজ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতার।

নৃবিজ্ঞানীরাও যুক্ত রয়েছেন এই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে। তাঁরা দেখছেন দয়ার মনোবৃত্তি কিভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। মানুষের মুড ভালো করার উপায় নিয়েও কাজ করছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টাই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হল মানসিক চাপ কমানো।

এই সমস্ত নরম নুড়ি-পাথরগুলো জড়ো করে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যেই কয়েক বছর ধরে পালিত হচ্ছে বিশ্ব সহমর্মিতা দিবস অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস ডে। ১৩ই নভেম্বর দিনটিকে এই হিসেবে পালন করা হয়।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক কেলি হার্ডিং তাঁর নতুন বই "দ্য রাবিট এফেক্ট"-এ দেখিয়েছেন দয়ালু হবার মাধ্যমে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে যা মানুষকে দীর্ঘায়ু করে।

আরেকটি গবেষণায় এক আশ্চর্য তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণাটি করা হয়েছিল ১৯৭০ সালে। অনেকগুলি খরগোশের ওপর একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। একদল দয়ালু গবেষকের অধীনে কাজ করেছে এমন খরগোশরা গবেষণায় সঠিকভাবে অংশ নিচ্ছে।

নরম আলোর মত এই সহানুভূতি নামের অনুভূতি আসলে এক জাদুকাঠি, যার ছোঁয়ায় জীবনের অনেক কাঠিন্য নরম হয়। বিন্দু-বিন্দু আলোর মতোই এই অনুভূতি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক এমনটাই কাম্য।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...