মীনাক্ষী আম্মান মন্দিরের চিথিরাই উৎসব

তামিল নাড়ুর মাদুরাই রাজ্যের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মাদুরাইয়ের অন্যতম প্রধান উৎসব ‘চিথিরাই’।'চিথিরাই উৎসব'কে বলা হয় উৎসবের উৎসব। দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে প্রায় ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ সমাগত হন মাদুরাইতে। চিথিরাই উৎসব একই সঙ্গে শৈব এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের উৎসব। সুন্দরেশ্বর আর দেবী মীনাক্ষীর বিবাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় চিথিরাই উৎসব। বিবাহের এই রেওয়াজ চলছে বহুকাল ধরে। প্রাচীন সঙ্গম সাহিত্যে এই উৎসবের কথা উল্লেখ রয়েছে। এই মন্দিরের মীনাক্ষী হলেন পার্বতী ও সুন্দরেশ্বর হলেন শিব। আর তাদের স্বর্গীয় বিবাহ অনুষ্ঠানকেই 'চিথিরাই উৎসব' বলে। প্রত্যেক বছর 'চিথিরাই উৎসব'-এর সময় দেবী মীনাক্ষী ও ভগবান সুন্দেশ্বরের মূর্তি রথে করে মন্দিরের রাস্তার চারপাশে ঘোরানো হয়। এই বিশেষ রথের নাম 'থির'। তবে এই উৎসব মীনাক্ষী কল্যাণম বা মীনাক্ষী থিরুকল্যাণম নামেও পরিচিত। প্রত্যেক বছর 'চিথিরাই উৎসব'-এর সময় বহু ভক্তের আগমন হয়ে এই মন্দিরে। অতীতে এই মন্দির তামিল ক্যালেন্ডারের একেবারে প্রথম মাসের হত। পরবর্তী সময়ে তা চৈত্র তথা এপ্রিলে বদলে যায়। 

প্রাচীনকালে নায়ক রাজারা মাদুরাইয়ের মন্দিরগুলির সংস্কার করেছিলেন। তারপর রাজা থিরুমালাইয়ের রাজত্বকালে এখানকার হিন্দু উৎসবগুলি আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা শুরু হয়েছিল। রাজা থিরুমালাই মীনাক্ষী মন্দিরের গৌরব আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন। কথা আছে রাজা থিরুমালাই একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন দেবী মীনাক্ষীই তাকে আবার সুস্থ করে তুলেছিলেন। তাই শুধুমাত্র প্রত্যেক দিন মীনাক্ষী দেবীর দর্শন করার জন্য তিনি মাদুরাইকে নিজের রাজধানীতে পরিণত করেছিলেন। তিনি মীনাক্ষী ও ভগবান সুন্দেশ্বরের স্বর্গীয় বিবাহ অনুষ্ঠানকে চিথিরাই উৎসবে পরিণত করেছিল। এছাড়াও থেনুরের বদলে মাদুরাইয়ের ভাইগাই-এর তীরে কাল্লাঝাগর ভ্রমণের প্রচলন করেছিলেন।

Chithirai-Festival_01

প্রত্যেক বছর এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়ার পর মোট ১৫ দিন চলে এই উৎসব। উৎসব চলাকালীন অষ্টম দিনে মাদুরাইয়ের শাসক হিসেবে মীনাক্ষী দেবীর রাজ্যভিষেক করা হয়। এই সময় সকল আচার অনুষ্ঠানের পর দেবীকে মুকুট পরানো হয় এবং তার হাতে রাজদণ্ড দেওয়া হবে। আর দশম দিনে অর্থাৎ এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ হয় দেবী মীনাক্ষী ও ভগবান সুন্দেশ্বরের বিয়ের অনুষ্ঠান বা থিরুকল্যাণম অনুষ্ঠান। এই বিবাহের শুভ সময়ে, মাদুরাইয়ের মহিলা ভক্তদের মধ্যে নতুন মঙ্গলসূত্র পরার প্রথা রয়েছে। আর ১৫ তারিখ হয়ে গাড়ি উৎসব আর ১৬ তারিখ হয়ে 'কাল্লাঝাগর' উৎসব।

চিথিরাই উৎসবের চলাকালীন দেবী মীনাক্ষী এবং সুন্দরেশ্বরের দর্শন পেতে আশেপাশের সমস্ত শহর ও গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ লোক মাদুরাইতে ভিড় করেন। এই সময় তাদের মধ্যে অনেকেই খোলা মাঠে ঘুমোন ও ভাইগাই নদীতে স্নান করেন। যদিও কোভিড পরিস্থিতি চলাকালীন গত দুবছর ভক্তদের ছাড়াই চিথিরাই উৎসব পালন করা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবছর দেবী মীনাক্ষী ও ভগবান সুন্দেশ্বরের দর্শন করতে পারবেন ভক্তরা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...