আজ ২২শে এপ্রিল 'বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস', একে ধরিত্রী দিবসও বলা হয়ে থাকে। ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ দান এই ধরনি, কোটি কোটি প্রাণের আবাসভূমি এটি। মানুষ পরিবেশকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে, বাড়তে থাকা দূষণ এবং অত্যাধিকমাত্রায় বেলাগাম জীবন যাপনের জন্য পরিবেশ আজ ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে।
ভারভরা রাও-এর কবিতার কথা মনে পড়ে যায়,
"পারলে তুমি বনিক ডেকে
গোধূলি দাও বেচে
গোদাবরীও শুকিয়ে যাবে
কেউ থাকবে না বেঁচে।"
কিন্তু এইভাবে কি সৃষ্টিকে শেষ হতে দেওয়া যায়? না! ধ্বংসের মুখ থেকে পরিবেশ বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে হবে আমাদেরই, তাই সচেতনা বাড়াতে প্রতি বছরই ২২ এপ্রিল দিনটিতে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় 'ধরিত্রী দিবস' বা 'আর্থ ডে'। যেকোন মূল্যে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। সবুজকে রক্ষার মাধ্যমে ধরিত্রীকে টিকিয়ে রাখাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট, পরিবেশের অবক্ষয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আজকের দিনে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে, তাহলেই মানুষ বাঁচবে।
কীভাবে শুরু হয়েছিল আজকের দিনের পথচলা...
১৯৭০ সালের ২২শে এপ্রিল প্রথমবারের জন্য পালিত হয়েছিল বসুন্ধরা দিবস। ১৯৬৯ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ইউনেস্কোর সম্মেলনে শান্তিকর্মী জন ম্যাক কনেল ধরনী মায়ের সম্মানে একটা দিন উৎসর্গ করতে প্রস্তাব করেন। তবে ১৯৭০-এর ২১শে মার্চ উত্তর গোলার্ধে এই দিনটি উদযাপিত হয়। পরবর্তী কালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর গেলর্ড নেলসন ও ডেনিস হেইস ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল 'আর্থ ডে'-এর প্রচলন করেন। কয়েক জন পড়ুয়ার সাহায্যে এদিন প্রথম ধরিত্রী দিবসের আয়োজন করা হয়। প্রায় ২ কোটি মানুষ দিনটি উদযাপন করেছিলেন। বিশ্বের ১৯২টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়। জলবায়ু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমেরিকার প্রচুর মানুষ এ দিন রাস্তায় নেমেছিলেন। সেই থেকেই দিনটির সূত্রপাত।
১৯৬৯ সালে সান্তা বারবারায় তেল উপচে পড়ার থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। তার সঙ্গে বাতাসে ধোঁয়াশা ও নদীর দূষণ নিয়ে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছিল। পথে নেমে এসেছিলেন পরিবেশ সচেতন সাধারণ মানুষ। এরপর গত পাঁচ দশক ধরে পরিবেশকে বাঁচাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে এসেছে এই 'বসুন্ধরা দিবস'। বর্তমানে আর্থ ডে নেটওয়ার্ক-এর উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে পালিত হচ্ছে আর্থ ডে। প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস গ্যাস নিষ্কাশন কমাবার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে এই দিনটিতেই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল ২০০ দেশ।
পরিবেশ রক্ষার কথা মাথায় রেখে ১৯৭০ সালের পর থেকে বিভিন্ন দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়। তবুও আজ পৃথিবী সঙ্কটের মুখে। প্রতি বছরই ধরিত্রী দিবস উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট একটি থিম থাকে। যেমন ২০২১ সালে ধরনী দিবসের ৫১ তম বর্ষের থিম ছিল 'আমাদের পৃথিবীকে পুনরুদ্ধার করো'। এই থিমটি প্রাকৃতিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া, উদীয়মান সবুজ প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী ধারণাগুলিকে জোড় দেয় যা বিশ্বের বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে পারে। আমাদের পৃথিবীকে পুনরুদ্ধার করা আমাদেরই কর্তব্য। এছাড়াও, বসুন্ধরা স্বাস্থ্যকর করা সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য বাধ্যতামূলক।
এই বছরের থিম হল - 'Invest In Our Planet'। এদিন বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, কর্মসূচি এবং মিছিলের আয়োজন করা হয়।জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে বিশ্বের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এই দিনটি পালন করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গোটা বিশ্ব এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। তাই প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে, পৃথিবীকে সুরক্ষিত ও বাসযোগ্য রাখতে বিভিন্ন দেশে এই দিনটি পালন করা হয়। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পরিবেশ ও জলবায়ুর ভরসাম্য রক্ষা করার গুরুত্ব যে কতখানি, সে সম্পর্কে জনসাধারণকে বার্তা দেওয়া হয়। একমাত্র মানুষই পারে এই অবক্ষয় রুখে দিতে।
বিশ্বউষ্ণায়ন জনিত কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ দূষণ সীমা ছাড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বসবাসযোগ্য রাখতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজকের এই দিনটি পালন করা হয়। আজ যখন করোনা ভাইরাসের দাপটে গোটা পৃথিবী বিধ্বস্ত তখন যেন আরও বেশি করে পরিবেশকে রক্ষা করতে শেখায়। অনুপ্রেরণা যোগায় পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে আরও নিরাপদ করে তুলতে।
বিশ্বকে দূষণমুক্ত ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলে বর্তমান ও ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। আমাদের উচিত বাস্তুতন্ত্রের ভরসাম্য রক্ষা করা তাই সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলা প্রয়োজন। আসুন সুন্দর পৃথিবীর সংকল্পে আমরা এক হই।