ছেলেটা দৌড়চ্ছে। কিছুতেই পেছনে তাকাবে না। পেছনে তাকালেই কালো অতীতটা ওকে গ্রাস করে নেবে অন্ধকারের মত। ওর চোখ মুখ জুড়ে জেগে রয়েছে অন্ধকার। অতীতের অন্ধকার। চকোলেট রঙের ছেলেটা এই সব ছেড়ে পালাতে চাইছে।
স্কুলের পরিবেশটা সবসময় ভাল লাগে সানির। রোজ মিষ্টি মিষ্টি পুতুল পুতুল বন্ধুগুলো ওর পাশে বসে। আজ সানি খুব খুশি। ওর জন্মদিনের চকোলেটগুলো সব বন্ধুকে দেবে। কিন্তু মাসুদ আসছে না কেন? ওর জন্যে স্পেশাল চকোলেট এনেছে সানি। সানি নাকি রোজ সকালে স্কুলে আসার আগে কাজে যায়। কোনদিন স্কুল থেকে ফিরেও নাকি যায় কাজে। আজ সানির জন্মদিনেও কী কাজ করতে গেছে মাসুদ!!
সানি আসলে জানে না যে চকোলেট ও মাসুদের জন্যে এনেছে সেটা তৈরী করতেই মাসুদকে রোজ যেতে হয় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কোকো গাছের বীজ থেকে মিষ্টি, স্বাদযুক্ত যে জিনিসগুলো তৈরী হয় মাসুদকে ঠেলে দেয় আঁধারে। শিশুশ্রমের অন্ধকারে। তাই তো মাসুদ দৌড়ে পালাতে চাইছে এই অন্ধকার থেকে।
১২ জুন শিশুশ্রমবিরোধী দিবস। আজও সারা বিশ্বে বহু শিশু নানা পেশায় যুক্ত। কেউ স্বেচ্ছায় কেউ বা অনিচ্ছায়, বাধ্য হয়ে। মোদ্দা কথা শিশুশ্রম আজও সত্যি। আজও পৃথিবীর বুকে জ্বলজ্বল করতে থাকা সত্যি।
আফ্রিকায় শিশুরা সবচেয়ে বেশী যুক্ত হয় চকোলেট তৈরীর পেশায়। প্রায় ৯৫ লাখ শিশু এখনো যুক্ত এই পেশার সঙ্গে। কোকো গাছের বীজ থেকেই মূলত তৈরী হয় চকোলেট। কাজটা পরিশ্রমসাধ্য। এই গাছের যত্ন নেওয়া, তার থেকে চকোলেট তৈরী, তার প্রথাগত প্রসসেিং সব। মিলিয়ে প্রয়োজন হয় অনেক শ্রমিকের। কিন্তু দুখের বিষয় এদের মধ্যে বেশীরভাগ শিশুকর্মী। এরা বেআইনীভাবেই যুক্ত থাকে এই পেশায়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট ঘন্টা কাজ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ চকোলেট তৈরী করে তবেই ছুটি মেলে।
যদিও এ নিয়ে বিস্তর প্রতিবাদ হয়েছে। সমাজকর্মীরা আন্দোলন করেছেন রীতিমত। আইন প্রণয়ণ হয়েছে। সরকার যথেষ্ট কড়া ও অনমনীয়। তবুও থামেনি এই অন্যায়। বিধিকে বুড়ো আঙুল দিয়ে জ্বলছে এই অন্ধকার।বিশ্ব শিশুশ্রমবিরোধী দিবসে এই অন্ধকার দূর হোক, এটাই কাম্য।