সোনালী রাংতার চকচকে মোড়ক। লোভনীয় গন্ধ। মোড়ক খুললেই গাঢ় ব্রাউন রঙের যে বস্তুটি বেরিয়ে আসে তার জন্য পাগল গোটা বিশ্ব। আট থেকে আশির কাছে তার নাছোড় ‘অ্যাপিল’। আকর্ষণ এড়ানো প্রায় অসম্ভব। চকোলেট।
কালো হোক বা ব্রাউন কিংবা সাদা রং যাই হোক না কেন টান একই।
চকোলেটের ব্যবহার কিন্তু আজকের নয়। চকোলেটের গল্প জানতে হলে পাড়ি দিতে হবে কলম্বাসের যুগে। চকোলেটের সবচেয়ে পুরনো ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে ১১০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে।
চকোলেটের জন্ম লাতিন আমেরিকার দেশে। তখন তার নাম হয়নি চকোলেট হিসেবে।
সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায় কাকাও গাছ। গুটির আকারে কোকো ফলের মধ্যে কোকো বীজ থাকত। বীজ শুকিয়ে, তারপর পুড়িয়ে বানানো হয় কোকো বিন। লাতিন ভাষায় এই গাছকে বলা হয় থিওব্রোমা কাকাও। এই কাকাও গাছের কোকো বীজ থেকেই তৈরি হয় চকোলেটের মূল উপাদান।
মায়া এবং অ্যাজটেকরা কোকো বীজ আগুনে ঝলসিয়ে গুঁড়ো করে তা গরম পানিতে ফেলে তার সঙ্গে মরিচ, মাঠ-বাদাম, মশলা ও ভেষজ উদ্ভিদের শিকড়-পাতা মিশিয়ে যে পানীয় তৈরি করত তার নাম ছিল ‘শোকোলাটল’
শোকোলাটেল কিন্তু যে কেউ খেতে পারত না। শুধুমাত্র ধনী, অভিজাত আর যোদ্ধাদের এই পানীয়ের অধিকার পেয়েছিল। ‘
লাতিন আমেরিকা থেকে কোকো ইউরোপে নিয়ে আসেন কলম্বাসের সঙ্গে। কিন্তু প্রখ্যাত স্প্যানিশ বীর হারনান কোরটেসই ইউরোপের মানুষের সঙ্গে কোকোর পরিচতি করান। শোকোলাটল নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন তিনি। শোকোলাটল পানীয়তে চিনি, ভ্যানিলা আর সুগন্ধী মিশিয়ে রাজা পঞ্চম চার্লসকে তা পরিবেশন করেন। রাজা পঞ্চম চার্লস শোকোলাটেল পান করে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। স্প্যানিশ দরবারে রীতিমতো হইচই পড়ে যায় নতুন পানীয়কে কেন্দ্র করে।
সেই সময় স্প্যানিশ রাজকুমারী মারিয়া থেরেসার সঙ্গে ফরাসি রাজা চতুদর্শ লুই বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। স্প্যানিশ রাজকুমারী মারিয়া থেরেসার এক কোকো বীজ পাঠান তাঁর ফরাসি ‘ফিঁয়সে’কে। হবু বৌমার সূত্রে ফরাসি রাজপরিবার সেই প্রথম চকোলেটের স্বাদ জানল।
সপ্তদশ শতক জুড়ে ইউরোপে চকোলেট নিয়ে উন্মাদনা চলতে থাকে। নতুন ট্রেন্ড তৈরি হয়। তবে সেই চকোলেট আমাদের চেনা চকোলেট নয়। চকোলেট টফি বা বার তখনও সামনে আসেনি।
চকোলেটের আধুনিক চেহারা প্রথম সামনে আসে আঠারো শতকে। চকোলেট বার তৈরি করে চমকে দেন জোসেফ ফ্রে। ১৮৬৮ সালে ইংল্যান্ডের বাজারে সাধারণ মানুষের নাগালে আসে বাক্স চকোলেট। ‘ক্যাডবেরি’ নামের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে আমজনতা। ইউরোপ থেকে আমেরিকা। তারপর বাকি দুনিয়া। সবটাই চকোলেটের দখলে।