বৈদিক যুগের সমাজব্যবস্থার আধুনিকতা নারী-স্বাধীনতার সমার্থক একথা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে। বৈদিক যুগ ইতিহাসের পাতায় নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে মূলত সাহিত্য সাধনার ক্ষেত্রে সমাজের অবদানের জন্যে।
সেই সাহিত্যচর্চার পথ মেয়েদের জন্যে সবসময় সহজ ছিল না মোটেই। বৈদিক যুগকে অন্তত তিনটে নির্দিষ্ট সময়ে ভাগ করা হয়। আদি-বৈদিক যুগে বৈদিক সমাজ মেয়েদের সাহিত্য সাধনার ক্ষেত্রে উদার ছিল না মোটেই। মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বাধা ছিল। বেদ-চর্চার কোন অধিকার ছিল না তাদের।
পরবর্তীতে সময় যত এগোয় পাল্টাতে থাকে সময়। চিন্তা-ভাবনাও বদলাতে থাকে। আদি বৈদিক যুগের নারীরা বৈদিক সমাজের পুরুষতন্ত্রকে প্রশ্ন করেছেন। কখনো উপেক্ষা করেছেন। লড়াই করেছেন পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে। তাই পরবর্তীতে অবস্থা বদলায়। কিন্তু তার জন্যে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে অনেক বৈদিক নারীকে। রোমাশা তাদের মধ্যেই একজন। রোমাশা বিদূষী, বুদ্ধিমতী, সাহসী ছিলেন।
ঋষি বৃহস্পতির কন্যা রোমাশা। বাবার সাধনার পথ দিশা দেখিয়েছিল মেয়েকে। উৎসাহিত হয়েছিলেন রোমাশা। বাবার সাহিত্যচর্চা ও সাধনা দেখে রোমাশা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
কিন্তু বেদ চর্চার ক্ষেত্রে প্রথমদিকে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন রোমাশা। তবে তিনি থেমে থাকেননি। বেদচর্চার ক্ষেত্রে নারীদের বাধা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। বৈদিক সমাজে মেয়েদের অবস্থান নিয়ে লড়াই করেছেন পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে।
ঋষি বৃহস্পতি মেয়ের আগ্রহ দেখে তাকে বেদচর্চায় উৎসাহিত করতে শুরু করেন। শুরুর দিকে আপত্তি থাকলেও পরবর্তীতে বাবার উৎসাহেই বেদচর্চা করেন রোমাশা।
রোমাশার বিয়ে হয়েছিল ঋষি ভাবয়ব্যের সঙ্গে। স্বামীও পাশে ছিলেন বেদ-চর্চা ও সাহিত্যসাধনার ক্ষেত্রে।
রোমাশা ঋকবেদের প্রথম মন্ডলের ১২৫ তম সূক্তের ৭ নং মন্ত্রের স্রষ্টা। তাঁর মন্ত্র নারীদের জীবনের কথা বলে। তাদের লড়াই-এর কথা বলে। রোমাশা যেন নিজের আত্মার কথাই এই মন্ত্রের মাধ্যমে বলেছেন।
ঋকবেদ চর্চার ক্ষেত্রে রোমাশার নাম দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। বৈদিক যুগের সাধিকাদের কথা বললে রোমাশার নাম প্রথম সারিতে আসে। এভাবেই বৈদিক নারীরা সমাজকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন।