যজ্ঞে মেয়েদের অধিকার নিয়ে বৈদিক সমাজে প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশাখা

মানব সভ্যতার আদিযুগে বেদ চর্চা নারী জীবনের অন্যতম পরিসর ছিল। সাহিত্য ও জীবন বৈদিক যুগেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা শুরু করেছিল। সে সময় যেমন নারী শিক্ষা নিয়ে নানান বিধি-নিষেধ ছিল তেমনি নারীরা সকল বাধা ভেঙে সাধনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।

পৃথিবীর সাহিত্যক্ষেত্রে প্রাচীন যুগ থেকে মধ্যযুগের এবং আধুনিক যুগেও নানান ক্ষেত্রে অনবদ্য সৃষ্টির নিদর্শন যারা রেখেছেন তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। এই সমস্ত কিছুর শুরু কিন্তু বৈদিক যুগ থেকেই হয়েছিল। অনেক ঐতিহাসিকই বেদ মন্ত্র রচনার বিষয়টা সাহিত্যের হিসেবেই দেখেন। তাঁদের মতে বহু নারী যেমন তাঁদের যে কোনো সাধনায় নিজেকে উজাড় করে চারিদিক আলোকিত করেছেন ঠিক তেমনভাবেই বেদমন্ত্র রচনা করে অনেক নারীরাই তাদের আলো ছড়িয়েছেন। বৈদিক যুগের নারীদের অনেকেই নারী জাগরণের অগ্রদূত বলেন।

অনেক নারী তাঁর মানবী সত্তাকে অতিক্রম করে এই বেদ চর্চার মাধ্যমেই তপস্বী হিসেবে নিজের জীবনের উত্তরণ ঘটিয়েছিলেন। তেমনি এক নারী ছিলেন বিদিশা।

বৈদিক ঋষিকা ছিলেন এই বিদিশা। ছোটবেলায় তাঁর পরিবারের কেউই কন্যা সন্তান চাননি। তাই ছোট্ট বিদিশার জন্মে অখুশি হয়েছিলেন পরিবার। তবে একেবারে অবহেলায় বড় হননি। বেদচর্চার যুগে নারীরা একদিকে যেমন নিজেদের অধিকার নিয়ে যথেষ্ট স্পষ্টবাদী এবং সক্রিয় ছিলেন তেমনই নারীদের অবদমনেরও কথা শোনা যায়।

নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের অভিব্যক্তি পুরুষদের মতই স্পষ্টভাবে জানাতে পারতেন। বিদিশাও ছোট থেকেই স্পষ্টবাদী ছিলেন। নিজের জন্ম নিয়ে পরিবার অখুশি হলেও বিদিশা কিন্তু নিজের ইচ্ছের কথা বলতে কখনো কুন্ঠাবোধ করেননি। স্পষ্টভাবে নিজের পরিবারকে জানিয়ে ছিলেন যে তিনি পড়াশোনা করতে চান। বেদচর্চাকেই নিজের জীবনের সাধনা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন বেদ চর্চায়।

বিদিশা বিবাহিতা কিনা তাই নিয়ে কোন নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। কোন ঐতিহাসিক বলেন তিনি বিবাহিতা ছিলেন, আবার কোন ঐতিহাসিকের মতে বিদিশা কখনোই বিয়ে করেননি। বিদিশা শুধু নিজের বেদ-চর্চারই পথ উন্মুক্ত করেননি, বরং মেয়েদের বিয়ের চর্চার ক্ষেত্রে প্রশ্ন করেছিলেন বৈদিক পুরুষ সমাজকে। মেয়েদের নানা অধিকার নিয়ে বিদিশা প্রশ্ন করেছিলেন। মেয়েদের হয়ে লড়াই করেছিলেন।

বৈদিক যুগে মেয়েদের যজ্ঞ করার অধিকার ছিল না। বিদিশা সেই বৈদিক নারী ছিলেন যিনি প্রথমবার এই প্রসঙ্গ নিয়ে বৈদিক সমাজকে প্রশ্ন করেছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে অনেক বৈদিক নারী এই নিয়ে কাজ করেছেন এমনকী এই প্রথাও পাল্টেছে অবশেষে। মেয়েরা যজ্ঞের অধিকার পেয়েছিল। এমনকী মেয়েদের যজ্ঞের জন্যে  রচিত হয়েছিল বিশেষ মন্ত্র। এই ক্ষেত্রে বৈদিক নারী বিদিশাকে বৈদিক সমাজে মেয়েদের নানা অধিকার রক্ষার পথিকৃৎ হিসেবে বললে ভুল বলা হয় না।

বৈদিক সমাজ এভাবেই নারী জাগরণের পথ খুলে দিয়েছিল। বিদিশা সারাদিন বেদ চর্চা নিয়েই থাকতেন। তাই তাঁকে সদ্যোদ্বাহা বলা হত। বিদিশার মতো নারীরা এভাবেই বর্তমান সমাজে মেয়েদের বেঁচে থাকার পথ সহজ করেছেন সুগম করেছেন।‌ বৈদিক বিদূষী নারীদের নিজস্ব জগৎ ছিল, সেই জগতে তাঁরা বারবার নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এভাবেই এই সকল নারীরা তাঁদের জীবনের মাধ্যমে সমগ্র নারী সমাজকে উৎসাহিত করে গেছেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...