ছোট থেকেই সূর্যের মতো তেজ ছিল এই মেয়েটার। কোন কাজের ক্ষেত্রে যদি বাবা বা মা বলতেন এই কাজ নারীদের জন্য নয় পুরুষদের জন্য, মেয়ে রেগে আগুন। মেয়েটার মনে হতো প্রকৃতির সৃষ্টি পুরুষ ও নারী। তাহলে কোন বিষয়ে বৈষম্য কেন! কাজের ক্ষেত্রে তা আগে থেকে নির্ধারিত কেন করে দেওয়া হবে যে এই কাজটি কেবলমাত্র পুরুষের, নারী সে কাজের যোগ্য নয়।
বৈদিক সমাজে এমন প্রশ্ন তোলার সাহস দেখিয়েছিলেন এই মহিলা ঋষি। তিনি সাবিত্রী। আগুনের মতই তেজী নারী ছিলেন। প্রয়োজনে সূর্যের মতো দীপ্তিমান হয়ে উঠতে পারতেন, আবার কখনো একেবারে শান্ত নদীর মত বয়ে যেতেন।
বিদূষী এই বৈদিক ঋষিকা বেদচর্চার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন সব সময়। এমনকি মন্ত্র রচনার ব্যাপারেও তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল।
বৈদিক সমাজে যে সমস্ত মেয়েরা সরাসরি লিঙ্গসাম্য নিয়ে প্রশ্ন করেছেন সাবিত্রী তাদের মধ্যেই একজন। বিয়ের বেশ কয়েকটি মন্ত্র তাঁর রচনা।
বিয়ের দায়িত্বের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সাবিত্রী। ঋকবেদের দশম মন্ডলের ৮৫তম সূক্তের ৩২-৪৭ তম মন্ত্রের ঋষি হিসেবে তিনি পরিচিত। বিয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা এই মন্ত্রগুলি ঋষিকা সাবিত্রী রচনা। তাঁর রচিত সূক্তগুলি বিবাহসূক্ত হিসেবে পরিচিত।
বিবাহিত জীবনে পুরুষ ও নারীর দায়িত্বের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই বিশেষ সূক্তগুলিতে। সাবিত্রীরচিত মন্ত্রে স্বামী-স্ত্রীর সমান দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। এমনকী সংসারের যেকোনো ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সমান অধিকারের কথাও বলা হয়েছে এই মন্ত্রে।
এমনটা বলা হয়, পরবর্তীকালে এই মন্ত্র গুলি পরিমার্জিত ও পরিবর্তিত হয়ে বট সাবিত্রীর ব্রতের মন্ত্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
যদিও এই বট-সাবিত্রী মন্ত্রের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট উপাচারের কথা বলা হয়। স্বামীর দীর্ঘায়ু লাভের জন্য স্ত্রীরা এই মন্ত্র পালন করে সাধারণত।
সাবিত্রী রচিত মন্ত্রে স্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনার জন্যেও স্বামীর উপাচার পালনের কথা বলা আছে। যদিও লিঙ্গ বৈষম্যের পাথর-সমান চাপে পড়ে সেই সব মন্ত্রের দেখা মেলে না আর।
সাবিত্রীর নাম দেবতা হিসেবে এমন ভাবেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে যে আমরা সাবিত্রীকে এক আদর্শ স্ত্রী হিসেবে মনে করি। যে স্ত্রী প্রয়োজনে স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবনকে উপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু ঋক বেদের সাবিত্রীর মন্ত্রে এর উল্টোটা করার কথাও বলা হয়েছে।
বৈদিক সমাজ যেমন কিছু ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের উদাহরণ দেখিয়েছে তেমনি লিঙ্গ সাম্যেও সাবিত্রীর মত মেয়েরা লড়াই করেছেন। যে লড়াই আসলে বর্তমান সমাজকে দিশা দেখিয়েছে।