আজ সাধারণতন্ত্র দিবস। গণতন্ত্র উদযাপনের দিন আজ। ১৯২৯ সালে পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণার পরে, ১৯৩০ সাল থেকে ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে ভারতের প্রতীকি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত করা হত। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। তখন থেকেই ঐ দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হতে শুরু করে। পরে দেশ চালানোর জন্য সাংবিধান রচনার প্রয়োজন পড়ে, সংবিধান রচনার পরে তা ভারতের গণপরিষদে কার্যকর করার জন্য একটি দিনের প্রয়োজন ছিল।
তখন ঐতিহাসিক গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়েই ২৬ জানুয়ারিকেই প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। সেই দিন সকাল ১০টা বেজে ১৮ মিনিটে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে সংবিধান কার্যকরী হয়। সেদিনই ভারতে প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল কুচ্কাওয়াজ, অর্থাৎ রাজপথে সেনাবাহিনীর সামরিক মহড়া। প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবস থেকেই এই ঐতিহ্যবাহী প্যারেডের পথ চলা শুরু হয়েছিল।
প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের মহড়া হয়েছিল জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা এবং পুলিশ বাহিনী মার্চ পাস্ট করেছিল। স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহরলাল নেহেরু। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। এছাড়া সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হন ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ হিন্দি ও ইংরেজি দুই ভাষাতে সেই দিন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন। সেদিন স্বশস্ত্রবাহিনী ৩১ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে গান স্যালুটের মাধ্যমে রাজেন্দ্র প্রসাদ বরণ করে নিয়েছিল। স্বশস্ত্রবাহিনীর ৩,০০০ জন সদস্য সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি ড. সুকর্ণকে প্রথম প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এছাড়া পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আজ প্রতি বছর দিল্লির রাজপথে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই দিল্লির রাজপথে এই সামরিক মহড়া চলত না। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত যথাক্রেম জাতীয় স্টেডিয়াম, কিংসওয়ে, লালকেল্লা ও রামলীলা ময়দানে কুচকাওয়াজ হয়েছিলে। ১৯৫৫ সালে দিল্লির রাজপথে প্রথমবারের জন্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ কাল ধরে হয়ে আসা প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ আমাদের দেশের ঐতিহ্য। কিন্তু এখানেও পুরুষতন্ত্রের ছাপ স্পষ্ট। ভারতে মহিলাদের বাহিনী রয়েছে বহু দিন ধরেই, বহুকাল ধরেই পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, দেশের সীমান্ত রক্ষার সুযোগ চেয়ে সরব এ দেশের মহিলারা। তাদের যুদ্ধে পাঠানো হয় না। ঠিক তেমনই কুচকাওয়াজে নারী ক্ষমতায়ন হয়নি। প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহড়ায় মেয়েদের দেখাই যেত না। সেই মিথ ভেঙেছেন কয়েকজন অসীম সাহসী নারীরা। জেনে নিই যুদ্ধংদেহী বলা বীরঙ্গনাদের কাহিনী।
২০১৮ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে নারীরা:
২০১৮ সাল দিল্লির সাউথ ব্লকে তখন মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী, দপ্তরের মুখ্য আধিকারিকও মহিলা। ২৬ শে জনুয়ারির সকাল। কুচ্কাওয়াজ শুরু হল, একের পর এক মোটরবাইক আসতে শুরু করল। চলন্ত বাইকে নানা ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে বা বসে তদানিন্তন তথা বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে স্যালুট ঠুকছেন বিএসএফের মহিলা জওয়ানেরা। দিল্লির রাজপথে 'সীমা ভবানী' বাহিনীর এই সামরিক কসরত দেশ-বিদেশের অতিথিদের মুগ্ধ করেছিল।
কলকাতাতেও সেবার নারীরাই কুচকাওয়াজের মুখ হয়ে উঠেছিলেন। বিএসএফের পাশাপাশি দিল্লির রাজপথে সেনা, বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনীর ট্যাবলো এবং প্যারেডে মহিলারা অংশগ্রহণ করেছিল। বায়ুসেনার ট্যাবলোয় ছিলেন তিন মহিলা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছন্দা, অদিতি এবং অমরদীপ। কুচকাওয়াজে ছিলেন ফ্লাইং অফিসার শ্রুতি। স্থলসেনার ক্যাপ্টেন শিখা যাদব এবং নৌসেনার সাব-লেফটেন্যান্ট রূপা নিজেদের বাহিনীর কুচকাওয়াজের দলের সারিতে উপস্থিত ছিলেন।
উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং আইটিবিপির কুচকাওয়াজেও সেবার মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আইটিবিপির 'হিমবীর' ট্যাবলোয় পুরুষ কম্যান্ডোদের সঙ্গে মহিলারাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৮ সালে কলকাতার রেড রোডে বায়ুসেনার ট্যাবলোয় যুদ্ধবিমানের চালকের পোশাকে জি-স্যুট পরা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জ্যোৎস্না চিকারাকে দেখা গিয়েছিল। সেনা ও নৌসেনায় না হলেও, এ দেশে বায়ুসেনায় যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে মহিলাদের নিয়োগ করা হয়। বায়ুসেনার প্রাক্তন প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহার আমল থেকেই মহিলাদের যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে নিয়োগের প্রচলন শুরু হয়। জ্যোৎস্না নিজে যুদ্ধবিমানের পাইলট নন। তাঁকে প্রতীকী হিসেবেই ঐ দিন উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ দেশে প্রতিরক্ষা এবং পুলিশ বললে সাধারণত যে ছবিটা সামনে আসে, ২০১৮ সালের কুচকাওয়াজে মহিলাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি সামরিক বাহিনীর চিরাচরিত চরিত্রের বদলের ইঙ্গিত প্রদর্শন করতে শুরু করে। দেশে আধা সামরিক ও সামরিক বাহিনীতে মহিলারা নিযুক্ত আছেন। তবে বহু ক্ষেত্রে পুরুষদের সমমর্যাদা পেলেও মাঠে-ময়দানে সামনের সারিতে কাজ করার সুযোগ পান না মহিলারা। সামরিক বাহিনীতে থাকলেও, মহিলাদের যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতিও থাকে না। কিন্তু সামরিক মহড়ায় মহিলাদের অংশগ্রহণে ২০১৮ সাল থেকে সেই রীতিতেই বদল আসতে শুরু হল। ২০১৮ সালের ২৬শে জানুয়ারি থেকে প্রতিরক্ষায় মহিলাদের ক্ষমতায়নই যেন ফুটে উঠল। পরের বছর নারী ক্ষমতায়নকেই ভিত্তি করে কুচকাওয়াজের সজ্জা সাজানো হল।
২০১৯ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে নারীরা:
২৬শে জানুয়ারি ২০১৯ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের থিম ছিল নারীশক্তির উত্থান। দিল্লির রাজপথে দেশের ৭০তম প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপনে নারী শক্তির উত্থানই মুল ভিত্তি হয়ে উঠল। সেনা কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অসম রাইফেলসের মহিলারা। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কুচকাওয়াজেও সামনের সারিতে মহিলারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বাইক নিয়ে নানা রকমের কসরৎ দেখালেন এক মহিলা সেনা অফিসার।
তিনশো পঞ্চাশ সিসির বাইক চালাতে চালাতে রাজপথে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন ক্যাপ্টেন শিখা সুরভি। ২৮ বছরের ক্যাপ্টেন সুরভিই প্রথম মহিলা, যিনি সেনাবাহিনীর মোটরবাইক আরোহী 'ডেয়ারডেভিল টিম'-এর সদস্য হিসেবে প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজপথের শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। বাইরে চড়ে অবিশ্বাস্য কসরতের জন্য বিখ্যাত সেনার 'ডেয়ারডেভিল টিম'-এর বয়স ৮৪ বছর হলেও, ২০১৯ সালেই প্রথম তাদের প্রজাতন্ত্র দিবসের টিমে কোনও মহিলা অফিসার যোগ দিয়েছিলেন। শুধু নামে নয়, শিখা কাজেও 'ডেয়ারডেভিল'। ছোটবেলা থেকেই বক্সিং, বাস্কেটবল খেলতেন শিখা। তথ্য-প্রযুক্তিতে বি-টেক হলেও খেলার মাঠের লড়াকু মনোভাবই তাকে সেনাবাহিনীতে টেনে এনেছিলেন।
মাত্র তিন মাস বাইকে কসরৎ করেই ক্যাপ্টেন সুরভি পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। প্রথমে হাত ছেড়ে বাইক চালাতেই ভয় পেতেন। তার পর হাত ছেড়ে বাইক চালানো, চলন্ত বাইকে উঠে দাঁড়ানো অভ্যেস করতে শুরু করেন। ২৬ জানুয়ারির সকালে চলন্ত বাইকে দাঁড়িয়েই রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানালেন তিনি। সুরভির মতোই বায়ুসেনার দলের সামনে ছিলেন এক মহিলা, ফ্লাইং অফিসার রাগি রামচন্দ্রন।
শুধু বায়ুসেনা বা সেনা নয়। সেবারের প্যারেডে অন্যান্য বাহিনীতেও মহিলা অফিসারদেরই জয়জয়কার ছিল। আসাম রাইফেলসের মহিলা জওয়ানদের একটি দল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিল। কুচকাওয়াজে প্রথমবারের জন্য গোটা বাহিনীতেই ছিলেন মহিলারা, ইতিহাস তৈরি করল অসমের মহিলা বাহিনী। তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেজর খুশবু কানোয়ার। পাঁচ মাস ধরে দিনে ৭-৮ ঘণ্টা করে তাদের অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ চলেছিল। মহিলা অনেকেই তাঁদের ছোট সন্তানকে বাড়িতে রেখে এসেছেন। ৩০ বছরের খুশবু কানওয়ার দেশের প্রাচীন আধা সামরিক বাহিনীর মহিলা বিভাগের কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করলেন। খুশবু কাঁওয়ার রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা।
তিনি বিবাহিতা এবং এক সন্তানের মা। তাঁর পিতা ছিলেন বাস কন্ডাক্টর। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া শেখেন তিনি। গলি থেকে রাজপথের, যাত্রা সহজ ছিল না। কিন্তু করে দেখালেন মেজর খুশবু কাঁওয়ার। কুচকাওয়াজে সকলকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। ২০১২ সাল থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অসম রাইফেলসে তিনি কর্মরত। তিনি নিজে বলেছিলেন, "আমি যদি এতদূর পৌঁছতে পারি,এ দেশের যে কোনও মেয়ের পক্ষেই স্বপ্নপূরণ সম্ভব।'' নৌসেনার কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন লেফট্যানান্ট কম্যান্ডার অম্বিকা সুধাকরন। সেনার সার্ভিসেস কোরের নেতৃত্বে ছিলেন এক মহিলা অফিসার, ক্যাপ্টেন ভাবনা কস্তুরী। ৩০ জন মহিলা ও পুরুষ অফিসারকে প্রতিযোগিতায় পিছনে ফেলে তিনি কুচ্কাওয়াজে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। ৭০তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ গোটা বিশ্ব ভারতের নারীশক্তির উত্তরণ দেখেছিল।
২০২০ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে নারীরা:
২০২০ সালে প্রথমবারের জন্য সিআরপিএফ মহিলাদের ডেয়ারডেভিলস টিম দিল্লির কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেছিল। সদর্পে নানা ভঙ্গিমায় মোটরবাইকে রাজধানীর রাজপথ কাঁপিয়ে গেলেন তাঁরা। নেতৃত্বে ছিলেন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর সুজাতা গোস্বামী। কন্সটেবল প্রধান আশা কুমারীর নেতৃত্বে তাঁর সহকারীরা বিম রোল প্রদর্শন করে, শূন্যে গুলি ছুঁড়েছিলেন।
দিল্লির বুকে প্রথম মহিলাদের বাইক র্যালি দেখা গেল ২০২০ সালে। সিআরপিএফের ২১ মহিলা কর্মী পাঁচটি মোটরবাইকের উপর মানব পিরামিড বানালেন, নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর অনিতা কুমারী। তাঁদের মাঝে সগর্বে উড়ছিল ভারতের তেরঙ্গা পতাকা। সেই প্রথম জওহর লাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এনসিসির ১৫ জন মহিলা সদস্য দিল্লির কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিল। মহিলাদের আরেক বাইক র্যালির নেতৃত্বে ছিলেন র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের ইনস্পেক্টর সীমা নাগ। তাঁকে চলন্ত বাইকের উপর দাঁড়িয়ে স্যাল্যুট করতে দেখা গিয়েছিল। চলন্ত বাইকের উপর দাঁড়িয়ে দুহাতে দুটি বন্দুক চালানোর ভঙ্গি দেখিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন হেড কনস্টেবল মীনা চৌধরী।
২০২১ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে নারীরা:
২০২১-এর কুকাওয়াজে ফ্লাইপাস্ট প্যারেডের নেতৃত্ব দিলেন মহিলা পাইলট, এয়ার লেফট্যানেন্ট স্বাতী রাঠোর। যা দেশের মধ্যে এই প্রথম। রাজস্থানের নাগৌর জেলার একটি গ্রামে জন্ম স্বাতীর। পড়ার জন্য তারা আজমিরের চলে আসেন এবং আজমিরের একটি স্কুলেই লেখাপড়া করেছেন স্বাতী। একদা এক আঁকার প্রতিযোগিতায় তেরঙ্গা পতাকা এঁকেছিল ছোট্ট স্বাতী। দেশের প্রতি ভালবাসা এবং জাতীয় পতাকার প্রতি আকর্ষণ প্রথম থেকেই ছিল। ধীরে ধীরে দেশের জন্যে কাজ করার স্বপ্ন বুনতে থাকেন তিনি।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি ভালবাসা বাড়তে থাকে। স্বাতীর বাবা মা মেয়ের ইচ্ছে বুঝতে পারেন। কলেজ শেষ করে এনসিসিতে যোগ দেন স্বাতী। মেয়ের স্বপ্নকে কোনওদিন বাধা দিতে চাননি বাবা। স্বাতী এনসিসি-তে শ্যুটিং-এ স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। আইএএফ-এর কমন অ্যাডমিশন টেস্টে ২০১৩ সালে স্বাতী উত্তীর্ণ হন। পরের বছর তিনি ডাক পান দেহরাদূনে, এয়ারফোর্স সিলেকশন বোর্ডের ইন্টারভিউয়ে। বাছাই পর্বের পরে ২০০ জন মহিলার মধ্যে শেষ অবধি স্বাতী-সহ মাত্র ৫ জন ছিলেন। স্বাতীর দাদাও দেশের সুরক্ষায় নিয়োজিত, তিনি ভারতীয় নৌসেনায় কর্মরত। স্বাতীর বাবা ভবানী সিংহ রাঠৌর রাজস্থান সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
তিনিও আজ মেয়ের কৃতিত্বে গর্বিত। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নন, স্বাতীর কৃতিত্বকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা দেবীও কুর্ণিশ জানিয়েছেন। গ্রামের মেয়ে স্বাতী রাঠৌর, ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে দিল্লিতে রাজপথের উপর দিয়ে চপার উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অনন্য নজির গড়েন।
স্বাতীর সঙ্গে অচলায়তন ভাঙলেন আর এক মহিলা,ছোটবেলা থেকেই সেও আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন। ২০২১ সালে রাজপথের কুচকাওয়াজে ছিলেন বায়ুসেনার ভাবনা। বর্তমানে রাজস্থানের বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ফ্লাইট লেফ্টেন্যান্ট ভাবনা মিগ-২১ বাইসন ফাইটার জেটের পাইলট। ভাবনার পরিবারের শিকড় ছড়িয়ে আছে বিহারের দ্বারভাঙার বৌর গ্রামে। তবে তিনি বড় হয়েছেন বেগুসরাই শহরে। ভাবনার বাবা একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁকে দেখে ভাবনাও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। এরপর এক বিখ্যাত বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করতেন।
কিন্তু শৈশবেই আকাশে ডানা মেলার স্বপ্ন জাঁকিয়ে বসেছিল। এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মানসবিহারী বর্মা ছিলেন ভাবনাদের প্রতিবেশী। এলসিএ তেজস-এর নির্মাণ প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন মানসবিহারী। তাঁকে দেখেই অনুপ্রাণিত হন ভাবনা। চাকরি ছেড়ে ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেন। ভাবনা ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেন ২০১৬ সালে। স্বদেশপ্রেমী নিজেই স্বদেশের এই বর্ণময় গৌরবের অংশ হয়ে উঠলেন।
কথায় বলে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে, আসুন আজ বলি যে রাঁধে সে বন্দুকও চালায়। আমাদের ঘরের মা বোন মেয়েরাই আজ কালী, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী হয়ে এক হাতে শত্রু সংহার কারুক আর অন্য হাতে সমৃদ্ধ করুক দেশের ঐতিহ্যকে, গর্বিত হই আমরা।