পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের দূর্গা পুজো করতে বাধা নেই। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও দূর্গা পুজোর পুরোহিতের কাজ করতে পারবেন। শোভাবাজার রাজবাড়িতে সম্প্রতি পুরোহিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এই কথাই জানালেন স্মৃতিতীর্থ, ধর্মশাস্ত্রাচার্য এবং সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারী। তিনি বলেন,"আমাদের দেশে এই প্রথা আর্যসমাজ থেকে চলে আসছে। অপালা, গার্গী, লীলাবতী, মৈত্রেয়ী, খনা---এঁরা কিন্তু ঋষিদের সঙ্গে বসে যজ্ঞ করতেন, পৌরোহিত্য করতেন। তাই আমাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে মহিলাদের আমরা সাদরে বরণ করে নিয়েছি। এই শিবিরে পুজোর পদ্ধতি শেখানো হয়। বাড়ির পুজো, নিজেদের পুজো যাতে সঠিক নিয়মে করতে পারেন। মহিলারা যদি চান দূর্গা পুজোও করতে পারেন। তাতে আমি না বলবো না।' তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক বিষয় থাকে, তাই পুজো করার ক্ষেত্রে কিছু বাধা আসাটা স্বাভাবিক"। তবে মহিলাদের পুজো করার উপর তিনি কোনও নিষেধ জারি করেন নি।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেব নারীর এই রজশঃলা হওয়াকে শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া বলে আখ্যা দেয়াছিলেন। তাহলে পুরোহিত সমাজের সমস্যা কোথায়? এই প্রসঙ্গে জয়ন্ত কুশারী বলেন, "প্রশিক্ষণ নিয়ে যদি কোনও মহিলা পুরোহিত বারোয়ারিতে পুজো করেন, পৌরোহিত্য করেন তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। শাস্ত্র মেনেই আমরা মহিলাদের পৌরোহিত্যের প্রতিবাদ করি না।"
তবে কি এবার দূর্গা পুজোতে মহিলা পুরোহিতের দেখা পাওয়া যাবে? কেননা সারা বছর বাড়ির পুজো বাড়ির মহিলারাই করে থাকেন। তাই দেবী দূর্গা বাঙালির ঘরে কারোর কাছে 'মা', কেউ কেউ তাঁকে 'মেয়ে' বলেও মনে করেন। তাই দেবী দূর্গা 'মা' বা 'মেয়ে' যাই হন তিনি তো আমাদের হৃদয়ে সবার আপন, তাঁকে পুজো করতে কেনই বা মহিলারা পারবেন না?
কলকাতা সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। প্রাচ্য বিদ্যা অর্থাৎ, বেদ-বেদান্ত, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, বৈদিক গণিত, সংস্কৃত ব্যাকরণ, উচ্চারণ---এই নিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে সংস্কৃত ভাষা যে দেব ভাষা নয়, লোক ভাষা সেটিও প্রচার করা এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। দিল্লি সহ সারা দেশে এই প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের মাধ্যমে সাড়া জাগিয়েছিল শুরু থেকেই। জয়ন্ত কুশারী এই প্রতিষ্টানের অধ্যক্ষ। এই প্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় কি ভাবে পুজোর সংকল্প, পৌরহিত্য করতে হবে। সঠিক ভাবে মন্ত্র উচ্চারণও পুরোহিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শেখানো হয়। আর এই কর্মশালার প্রধান ব্যক্তি হলেন জয়ন্ত কুশারী।
জয়ন্ত কুশারী আরও জানান , "প্রথম পুরোহিত কর্মশালা শিবিরেই ১০০ ছুঁইছুঁই পুরোহিত আসেন। জায়গার অভাবে মাত্র ৩০-৪০ জনকে আমরা সেবার প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছিলাম। আস্তে আস্তে এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। মহিলারাও আমাদের এই শিবিরে আসেন।"