কালের নিয়মে অনেক কিছুই বদলেছে, কিন্তু নারী নির্যাতনের কোনও পরিবর্তন হয়নি। আজকের এই একবিংশ শতাব্দীতেও একইরকম রয়ে গেছে। যেটা বদলেছে সময়ের সঙ্গে, তাহল তার চেহারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার কদর্য চেহারাটা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। আইন, প্রশাসন, সচেতনতামূলক প্রচার কোনও কিছু দিয়েই এই নির্যাতন আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই তো দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরও উন্নাও-হায়দ্রাবাদ-মালদায় নারীদের উপর ঘটে যায় পাশবিক অত্যাচার এবং হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ। তবুও থামলে হবে না। অপরাধীদের যোগ্য জবাব দিতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে তাঁদের বিরুদ্ধে। সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে যেতে হবে।
নারী নির্যাতন এই মুহূর্তে আমাদের দেশে অন্যান্য আরও পাঁচটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা। গোটা দেশ এই মুহূর্তে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এরকমই একটি পরিস্থিতিতে এক নতুন ভাবনা নিয়ে নারী নিরাপত্তায় এগিয়ে এল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। নারী নিরাপত্তার দিকটিতে গুরুত্ব দিয়ে এবার নতুন অ্যাপ নিয়ে এলেন পুলিশকর্তারা। অ্যাপের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অভয়া’। এই ‘অভয়া’ অ্যাপ শহরের নারীদের স্বার্থে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। সবরকমের বিপদে, সমস্যার সমাধানে এবং পুলিশের সাহায্য নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার থেকেই চালু করা হয়েছে এই বিশেষ অ্যাপ ‘অভয়া’। এই অ্যাপ ছাড়াও এদিন মহিলাদের জন্য একটি হেল্পলাইন নম্বর ও ই-মেলও চালু করা হল পুলিশের পক্ষ থেকে। অ্যাপটি স্মার্টফোনে ডাউনলোড করে নিলেই, তার সুবিধা নিতে পারবেন শহরের প্রতিটি নারী।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের অফিসে পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈন সাংবাদিক সম্মেলন করে মহিলাদের জন্য এই অ্যাপ চালু-সহ একাধিক সুবিধার কথা জানান। তিনি জানিয়েছেন যে, এই অ্যাপের আয়তন খুবই ছোট, মাত্র ৪.৮ এমবি। স্মার্টফোনে গিয়ে গুগল প্লে-স্টোর থেকে খুব সহজেই ছোট্ট এই অ্যাপটি নামিয়ে ফেলতে পারবেন সকলে। এরপর ওটিপির সাহায্যে নিজের নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিলেই এই অ্যাপের সমস্ত সুবিধা নেওয়া সম্ভব হবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, এই অ্যাপে রয়েছে একটি লাল রঙের প্যানিক বাটন। সেই বাটন তিনবার টিপলেই তা সবুজ হবে। তারপরই সঙ্গে সঙ্গে সেই খবর পৌঁছে যাবে কাছাকাছি থানা, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ও এসিপি পদমর্যাদাভুক্ত আধিকারিকের কাছে থাকা ফোনে। তাতে যে বা যিনি সেটি ব্যবহার করেছেন, তাঁর লোকেশন পুলিশ পেয়ে যাবেন। এর সঙ্গে পুলিশের সাহায্যপ্রার্থীর কাছেও একটি বার্তা পাঠানো হবে। তারপর পুলিশ ওই মহিলাকে সাহায্য করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় যেকোনো সময় কোনও নারী বিপদে পড়লে, ওই অ্যাপের প্যানিক বাটনে ক্লিক করলে এক লহমাতেই মুশকিল আসান হয়ে যাবে।
পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী দিনে নারীসুরক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে এই ‘অভয়া’ অ্যাপটি। তিনি ‘অভয়া’ কে নিয়ে খুবই আশাবাদী। জানা গেছে যে, ‘অভয়া’র কার্যক্ষেত্র হবে পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় থাকা বুদবুদ থানা এলাকা থেকে চিত্তরঞ্জন পর্যন্ত। এই অ্যাপের পাশাপাশি এদিন একটি হেল্পলাইন চালু করার কথাও পুলিশ কমিশনার জানান। মহিলাদের জন্য হওয়া এই হেল্পলাইনে কেউ যদি ফোন করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে রেকর্ড হয়ে যাবে। তা থেকে পুলিশ যাবতীয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এছাড়াও womenseftyadpc@gmail. Com নামে একটি মেল আইডি চালু করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এই মেলের মাধ্যমেও মহিলারা আলাদা করে অভিযোগ জানাতে পারবেন বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন যে, ইতিমধ্যেই প্রতিটি থানায় মহিলা পুলিশকর্মী দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আসানসোল ও দুর্গাপুরে দুটি মহিলা থানা আছে।
আশা করা যায় ‘অভয়া’ শিল্পাঞ্চলের নারীদের সুরক্ষায় সব সময় তাঁদের পাশে থাকবে। আর তা সম্ভব হলে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এই সাধু উদ্যোগও সর্বতভাবে যে সার্থক হবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।