সেনাবাহিনীবিহীন দেশ..নাগরিকরা আছেন নিশ্চিন্তে

হীরক রাজ্য শিশু রাজ্য মনে বড় সাধ 

প্রবীণেরা যেন তাকে করেন আশীর্বাদ

এই লাইন দুটি কিন্তু সব বাঙালির খুব  চেনা। কিন্তু একথা বলছি তার কারণ  আজ কিছু  শিশু রাজ্য নয় - শিশু  রাষ্ট্র  অর্থাৎ অনুরাষ্ট্রের কথা বলবো যারা প্রবীণ রাষ্ট্রের আশীর্বাদধন্য  বলা চলে। যদিও হীরকে সেনাবাহিনী  থাকলেও সে ছিল শিশু। আর আজ যাদের কথা বলবো তারাও শিশু এবং সেনাবাহিনী বিহীন। 

যেকোনো দেশের সেনা বাহিনী সেই দেশের  শক্তি প্রতিরক্ষায় তাদের অবদান তা তো শুধু কিছু শব্দে বিশ্লেষণ করা যাবে না। কিন্তু    এই অস্থির সময়ে   দাঁড়িয়ে   পৃথিবীতে এমন দেশের সংখ্যা নেহাৎ কম নয় যাদের কোনো সেনাবাহিনীই নেই।  অবাক লাগতেই পারে - কেমন কল্পনার জগৎ ?? একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র দেশ; অথচ তার কোনো সেনাবাহিনী নেই। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই হিংসা-বিধ্বস্ত পৃথিবীতে   এমন বেশ কিছু দেশ আছে  

প্রথমেই বলি প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে কয়েকটি দ্বীপ সমন্বিত  কিরিবাটি দেশটির কথা। এখানে সেনাবাহিনী না থাকা সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু তাই বলে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি নেই তা নয়। সেই  প্রতিরক্ষার সমস্ত দায়িত্বই  পুলিশ বাহিনীর উপর   তবে  অত্যাধুনিক অস্ত্র সম্বলিত  নয় তারা   সমুদ্র পরিবেষ্টিত একটি দেশ,বিভিন্ন দ্বীপের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে একটি মাত্র নৌকা।  অবস্থানানুযায়ী যেকোনো মুহূর্তেই  কোনো দেশ তাকে   আক্রমণ  করতে পারে। কিন্তু এমন কোনো ঘটনাই ঘটে না সেখানে। বরং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর  সাহায্যই  অতি  যত্নেই  থাকে এই ছোটো দেশটি।

এবার বলি ফ্রান্স আর স্পেনের  আশীর্বাদধন্য একটি ছোট্ট দেশ  অ্যান্ডোরার কথা। এখানে  নামেই একটা সেনাবাহিনী আছে ,তবে তার কাজ শুধু বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শোভাযাত্রার ব্যবস্থা করা। কিন্তু দেশটির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া আছে ফ্রান্স আর স্পেনের হাতে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ৬০০ সৈন্যের একটি বাহিনী ছিল এখানে। তারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণও করলেও যুদ্ধের ভয়াবহতায়  হতাশ হয়ে আর কোনোদিন কোনো যুদ্ধ করেনি এই বাহিনী। তবে রাষ্ট্রীয় সংকট উপস্থিত হলে দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ মানুষ একত্রিত হন। এখনো সেই ভাবে রয়েছেন তারা নিশ্চিন্তে।

ad

১৯৮১ সালে  সংবিধান মতে প্রতিরক্ষা খাতে সমস্ত খরচ বন্ধ করে দেওয়ার  সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ডোমিনিকায় ।আর তারপরেই সেনাবাহিনী কার্যত উঠে যায়। একদম স্থানীয় স্তরে কিছু বাহিনী প্রতিরক্ষার কাজ করে থাকে। তবে এই দেশের ইতিহাস কিন্তু এমন নয়। ফ্রান্স আর ব্রিটেনের বহু রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সাক্ষী ডোমিনিকা। এমনকি  সপ্তবর্ষের যুদ্ধও ঘটেছিল এই ডোমিনিকাকে ঘিরেই। সেই দেশে আর যুদ্ধ নেই। অতএব গোটা দেশটাই শুধু মেতে থাকে প্রকৃতির রূপ আর সংস্কৃতির উদযাপনে। দেশটা তো তার বর্ণময় প্রকৃতির জন্যই পরিচিত গোটা ইউরোপের কাছে।

১৮৬৬ সালের ঘটনা   লিচেনস্টাইনকেও তার সেনাবাহিনী  প্রত্যাহারে বাধ্য করে। কিন্তু  প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করে  পুলিশ বাহিনী   পুলিশ কর্মচারীর সংখ্যাও মাত্র ১২৫।  আশ্চর্যের  বিষয় হলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানকার অপরাধের হার আশ্চর্যজনকভাবে কম। আর  এবার বলবো এমন এক দেশের কথা  যাকে  আক্রমণ করার কথা  কেউ ভাববেও   না আর সে সাহসও হবে না।তা হলো পোপের বাসগৃহ  ভ্যাটিকান সিটি। আর এমনিতেই ইতালির সেনাবাহিনী এই শহরের নিরাপত্তার কাজ করে যায়।

জাতিপুঞ্জের তালিকাভুক্ত এমন আরো অনেক দেশ আছে যাদের কোনো সেনাবাহিনী নেই যেমন :মার্শালদ্বীপপুঞ্জ   ,  সংযুক্তরাষ্ট্রমাইক্রোনেশিয়া , নাউরু ,সেন্ট লুসিয়া ,সেন্ট ভিনসেন্ট গ্রেনাডাইন দ্বীপপুঞ্জ ,সামোয়া ,সলোমান দ্বীপপুঞ্জ,টুভালু আবার এমন দেশও আছে, প্রতিরক্ষার জন্য যারা অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল। কোস্টারিকা, আইসল্যান্ড, মনোকাএদের কারোরই নিজেদের দেশের প্রতিরক্ষার জন্য কোনো বাহিনী নেই। দিব্যি অন্য দেশের উপর দায়িত্ব দিয়ে বসে আছে। যাই হোক মানসিকতার এই পরিবর্তনগুলি আজ খুব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।  যদিও সেখানে শাসন - শৃঙ্খলার প্রয়োজন আছে বৈ কিকিন্তু ক্ষমতা দখলের লড়াই বা আক্রমনাত্মক মনোভাব নিষ্প্রয়োজন।  আসলে সবটাই প্রয়োজন ভিত্তিক।  সব দেশের ক্ষেত্রে  তা কার্যকরী করা অসম্ভব।  তবে স্বপ্ন তো দেখায় যায় , আর তা কতটা সত্যি হতে পারে তা নয় সময়ের হাতেই থাকে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...