অদম্য মনোবলে অসাধ্য সাধন

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে সৃষ্টি শারীরিক বলকে আমাদের দৈনন্দিন কাজের অপরিহার্য সহায়ক মনে করা হলেও, তা আংশিক সত্যি। হিসেবমতো দৈনন্দিন কাজের অপরিহার্য সহায়ক 'বল'টির নাম- 'মনোবল'। কোনও কাজই 'মনোবল' ছাড়া হয় না, এ কথার সারার্থ বুঝিয়েছেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক তরুণ বিদেশিনী। শুধুমাত্র মনোবলের জোরেই অভাবনীয় কান্ডটি ঘটিয়ে ফেলেছেন তিনি। 

শরীরের অন্যতম প্রধান অঙ্গ 'দু'টি হাত' ছাড়াই জন্ম নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার জেসিকা কক্স। তাতে কী? ছোট থেকেই মনে বিন্দুমাত্র অভাববোধ ঢুকতে না দিয়ে, হাত ছাড়াই দিব্যি দৈনন্দিন সব কাজ করে যাওয়া সম্ভব এই ব্রত বেঁধে নিয়েছিলেন জীবনে। তার সেই ব্রতই তাকে পৌঁছে দিয়েছে 'পাইলট হব, পা দিয়েই ওড়াব প্লেন'- এই অভাবনীয় লক্ষ্য শিখরে। স্বপ্নে নয়, বাস্তবেই পা দিয়ে বিমান চালিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জেসিকা।

ছোট থেকে নাচেও তালিম নিয়েছেন জেসিকা। এর বাইরে কুংফুতে ব্ল্যাক বেল্টেরও অধিকারী তিনি। জেসিকার কথায়, 'আমি কখনো বলি না যে, আমি করতে পারবো না। আমি শুধু বলি, হয়তো আমি হয়তো এখনও সেভাবে সফলতা অর্জন করতে পারিনি, আমি চেষ্টা করে চলেছি। জন্মের পর যখন আমি বুঝতে শিখেছি যে আ্মায় শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ বাদ দিয়েই জীবনে এগিয়ে চলতে হবে তখন থেকে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। জন্মের পর বাবা-মা খুবই হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু তারাও আমাকে কখনো বুঝতে দেননি যে, আমার দু'টি হাত নেই। অন্যরা আমার দিকে অন্যভাবে তাকাতো এবং তাদের কেউ কেউ কখনো কখনো নেতিবাচক মন্তব্যও করে ফেলত। কিন্তু আমি তাদের সেই নেতিবাচক মন্তব্যকেই সব সময় ইতিবাচক মন্তব্য হিসেবে দেখার চেষ্টা করতাম। কখনও কষ্ট পেতাম না। এটাই আমাকে লড়াকু করে তুলেছে।'

ছোটবেলা থেকেই জেসিকার মধ্যে প্লেন চালনা সম্পর্কে এক ধরনের ভীতি এবং আকর্ষণ দুই-ই কাজ করতো। তবে তিন বছর আগে যখন একজন পাইলট তাকে প্লেন চালনা সম্পর্কে উৎসাহিত করেন তখন থেকেই তার ভীতি সরে যেতে শুরু করে। তার কথায়, 'প্রথমে ভেবেছিলাম, উনি হয়তো আমার সঙ্গে মজা করছেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারি তিনি সত্যি সত্যিই আমাকে প্লেন কীভাবে চালাতে হবে তা শেখানোর বিষয়ে আন্তরিক। তিনি আমাকে বিমান চালনা শেখানোর জন্য প্রতি মুহূর্তে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন, আমিও হই। উনি বিষয়টাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। তিন বছরের প্রচেষ্টায় আমি এখন 'হালকা' বিমান চালনার লাইসেন্স পেয়েছি।'

বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের উদ্দেশ্যে জেসিকা বলেন, ‘নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার অনেক উপায় রয়েছে। নিজের মধ্যে অদম্য স্বপ্ন আর শক্তি থাকলে সব কিছুই জয় করা সম্ভব। তোমরাও যে একদিন পারবে, তার প্রমাণ আমি নিজেই।’

হাত ছাড়া বিমান চালনা খুবই বিপজ্জনক বলে অনেকে তাকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও দমে যাননি জেসিকা কক্স, পুরো উদ্যোমের সঙ্গে নিজের সবটুকু 'মনোবল' দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...