বাংলার গর্ব: বিজ্ঞানী অশোক সেন

সাম্প্রতিক অতীতে ডঃ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি যেমন আমাদের মনে গর্বের সঞ্চার করেছিল তেমনই আশা জাগিয়েছিল আরেক বিখ্যাত বাঙালীর নোবেল প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে। সেই সম্ভাবনাময় প্রতিভাবান বিজ্ঞানী অশোক সেনের আজ জন্মদিন। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় যার সাড়া জাগানো আবিষ্কার তাঁকে এনে দিয়েছে বিশ্বের সেরা কিছু সম্মান। ২০১২ সালে তিনি পেয়েছেন 'ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স প্রাইজ', ২০১৪ সালে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন 'ডিরাক মেডেল', এমনকি অতি সম্প্রতি ২০২০ সালে 'ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স ব্রেক-থ্রু প্রাইজ' সহ বহু দেশীয় ও ‌আন্তর্জাতিক পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে।

এহেন বিজ্ঞানসাধক মানুষটি ১৯৫৬ সালে আজকের দিনেই জন্মেছিলেন কলকাতায়। পদার্থবিদ্যা তাঁর রক্তে। বাবা অনিল কুমার সেন ছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের ফিজিক্সের অধ্যাপক। উত্তর কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যাপীঠ থেকে স্কুলজীবনের পাঠ শেষ করার পর তিনি ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখানেই তাঁর পদার্থবিদ্যায় উৎসাহের প্রদীপ জ্বলে, জ্বালান তৎকালীন প্রফেসর এবং বিখ্যাত বিজ্ঞানী অমল কুমার রায়চৌধুরী।

AshokeSen

স্নাতক শেষ করে আই. আই. টি. কানপুর থেকে তিনি স্নাতকোত্তর লাভ করেন এবং নিউ-ইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরাল ডিগ্রী লাভ করেন। পূর্বে মুম্বাই- এর টি. আই. এফ. আর. (T.I.F.R.) এবং বর্তমানে তিনি এলাহাবাদের হরিশচন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রফেসর। একইসঙ্গে NISER ভুবনেশ্বরের সম্মানীয় প্রফেসর, এম. আই. টি. (MIT) ও কোরিয়া ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডি-র ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।

সম্প্রতি ২০২০ সাল থেকে তিনি IISER, ভোপালেরও ভিজিটিং প্রফেসর পদে নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁর গবেষণার মূল বিষয় পদার্থবিদ্যার স্ট্রিং থিওরি। সহজ ভাষায় বলা যায় স্ট্রিং থিওরি হল এমন এক থিওরি যেখানে মহাবিশ্বের সমস্তকিছু ছোটো ছোটো তার বা স্ট্রিং দিয়ে তৈরি কল্পনা করে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়।১৯৯৮ সালে অশোক সেন রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন এবং কে ওনাকে নমিনেট করেছিলেন জানেন? আধুনিককালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং যিনি নিজেও স্ট্রিং থিওরি নিয়ে গবেষণায় মগ্ন ছিলেন।

বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অশোক সেন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য ২০০১ সালে পদ্মশ্রী, ২০১৩ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হলেও রয়েছেন প্রচারের আড়ালে। বিনয়ী, প্রচারবিমুখ এই বিজ্ঞানতাপস এক সহজ-সরল জীবনযাপন করেন এলাহাবাদে। ভালোবাসেন আমিষ খেতে। তাঁর জন্মদিনে আমরা সকল বাঙালিরা তাঁর সুদীর্ঘ সুস্থ জীবন ও বিজ্ঞানচর্চায় তাঁর নজিরবিহীন সাফল্য কামনা করি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...