শীতের সবজি দিয়ে মাছ
পালংশাক দিয়ে বেলে মাছ
শীতের নতুন ওঠা পালং শাকের সঙ্গে বেলে মাছের চচ্চড়ির মজাই আলাদা। নতুন আলু আর নতুন পালং শাক দিয়ে কীভাবে রাঁধতে হবে বেলে মাছ সেটাই দেখা যাক।
কী কী লাগবে
বেলে মাছ-৩০০ গ্রাম
আলু-২০০ গ্রাম
পালংশাক- ১ আঁটি( বড়)
হলুদ গুঁড়ো-৩ চা চামচ
জিরে গুঁড়ো- ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো – ২ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো- স্বাদ অনুযায়ী
পেঁয়াজ- ২৫০ গ্রাম
রসুন- ৫ কোয়া
আদা-৩০ গ্রাম
কাঁচালঙ্কা-৪ টে
শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন্য
সর্ষের তেল- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
বেলে মাছগুলো ভালো ভাবে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। পালংশাক বারবার ধুয়ে, মাটি পরিষ্কার করে নিয়ে, মাঝারি আকারে কেটে রাখতে হবে। আলু খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে চচ্চড়ির মতো লম্বা লম্বা করে কেটে নিতে হবে। পেঁয়াজ একটু মোটা করে লম্বা ভাবে কেটে রাখতে হবে। রসুন কুচিয়ে নিতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তাতে তেল দিয়ে গরম হলে বেলে মাছগুলো ভেজে নিতে হবে। তেল কমে এলে আর একটু তেল দিয়ে আলু হালকা ভেজে নিতে হবে। এবার রসুন আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ ভেজে নিয়ে পালং শাক, আদাবাটা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, আলু ভাজা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। নুন আর কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে গ্যাস অল্প কমিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে আলু একটু নরম হলে আঁচ বাড়িয়ে ভেজে রাখা মাছগুলো দিয়ে সাবধানে নাড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, মাছ যেন ভেঙে না যায়। শাকের জল শুকিয়ে এলে, বেশ ঝরঝরে হলে নামিয়ে রাখতে হবে। খেতে হবে গরম ভাতের সঙ্গে ।
ট্যাংরা চচ্চড়ি
শীত মানেই ছোট মাছ। আর ছোট মাছের মধ্যে ট্যাংরার অন্য কদর। নতুন ওঠা নানান সবজি দিয়ে ট্যাংরা চচ্চড়ির মজা নিতে পড়তে হবে এই লেখাটি
কী কী লাগবে
ছোট দেশি ট্যাংরা মাছ-৩০০ গ্রাম
নতুন ওঠা আলু-১৫০ গ্রাম
শিম-১৫০ গ্রাম
বেগুন-৩টে( বড়)
টমেটো- ২ টো(বড়)
পেঁয়াজ-২০০ গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো-৩ চা চামচ
জিরে গুঁড়ো-১ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো-২ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো-স্বাদ অনুযায়ী
আদাবাটা-২ চা চামচ
শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন্য
কাঁচালঙ্কা-৪টে
ধনেপাতা-১ আঁটি
সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য
নুন- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
ট্যাংরা মাছ কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে নুন-হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে। আলু আর বেগুন ধুয়ে নিয়ে লম্বা লম্বা করে মাঝারি মোটা করে কেটে রাখতে হবে। শিমের পাশের সুতো ফেলে দিয়ে মাঝারি মাপে কেটে নিতে হবে। পেঁয়াজ সরু সরু করে কেটে নিতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তাতে তেল দিয়ে গরম করে ট্যাংরা মাছগুলো মাঝামাঝি ভাবে ভেজে নিতে হবে। কড়াইতে তেল কমে এলে তেল দিয়ে গরম করে বেগুন ভেজে নিতে হবে। এরপর শুকনো লঙ্কা আর পেঁয়াজকুচি ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ লালচে হলে আলু আর শিম দিয়ে ভেজে নিতে হবে। তারপর আদাবাটা, টমেটো কুচি, হলুদ গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা আর নুন দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে অল্প জল দিয়ে গ্যাস কমিয়ে খানিকক্ষণ রেখে সবজি প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা বেগুন আর ট্যাংরা মাছগুলো দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। প্রয়োজন হলে সামান্য জল দিতে হবে। গ্যাস বাড়িয়ে, ধনেপাতা কুচি দিয়ে পুরো চচ্চড়িটা শুকিয়ে ঝরঝরে করে নিতে হবে। তারপর? গরম ভাত আর ট্যাংরা মাছের চচ্চড়ি-ভাতের এপার ভাঙে আর ওপার ভাঙে। সে স্বাদ যার নেওয়া হয় নি তার জন্য দুঃখই সম্বল।
ফুলকপি দিয়ে কই মাছের ঝোল
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে কই মাছের নানান পদের বর্ণনা আছে। কই মাছ বাংলার নিজস্ব সম্পদ। বর্তমানে যদিও বিদেশি কই বাজারে প্রচুর পাওয়া যায় কিন্তু দেশি কইয়ের স্বাদ আলাদা। শীতের দিনে এ মাছের স্বাদ আরও খোলে।
কী কী লাগবে
কই মাছ-৬ টা
ফুলকপি-১ টা( বড়)
আলু-১২ টুকরো( মাঝারি)
হলুদ গুঁড়ো-৪ চা চামচ
জিরে গুঁড়ো-২ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো-২ চা চামচ
আদাবাটা-২ চা চামচ
কাঁচালঙ্কা-৫টা
জিরে-ফোড়নের জন্য
শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন্য
তেজপাতা-ফোড়নের জন্য
গরমমশলা গুঁড়ো-আন্দাজমতো
সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য
চিনি-সামান্য
নুন-আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
কই মাছ আঁশ ছাড়িয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। ফুলকপির ফুলগুলো মাঝারি মাপে কেটে নিতে হবে। আলু ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে মাঝারি সাইজে কেটে রাখতে হবে। আদা বেটে নিতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তেল গরম করে কইমাছগুলো হালকা করে ভেজে নিতে হবে। কই মাছ তেলে দেবার সময় সাবধানে দিতে হবে। এই মাছ ভাজতে হবে ঢাকা দিয়ে। না হলে মাছ ফেটে গায়ে গরম তেল ছিটে আসতে পারে। মাছ ভাজার পর তেল কমে এলে আর একটু তেল দিয়ে গরম করে আলু ও ফুলকপি ভেজে নিতে হবে। তেলে শুকনো লঙ্কা, জিরে আর তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে ভাজা আলুগুলো দিতে হবে। এর পর হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, আদাবাটা দিয়ে কষাতে হবে। মশলা কষা হলে চিনি আর নুন দিয়ে নেড়েচেড়ে ২ টো কাঁচালঙ্কা মধ্যেখান দিয়ে চিরে দিতে হবে। বেশ কিছুটা জল দিয়ে ফুলকপিগুলো দিয়ে ফোটাতে হবে। একবার ফুটলে ভাজা মাছগুলো আর বাকি কাঁচালঙ্কা গুলো চিরে দিয়ে আবার ফোটাতে হবে। কই শক্ত মাছ তাই ঝোল অনেকক্ষণ না ফোটালে স্বাদ হবে না। জল কমে এলে অল্প গরম জল দিয়ে ফোটাতে হবে। নামানোর সময় গরমমশলাগুঁড়ো দিয়ে নামাতে হবে। আর পরিবেশনের সময় চাই গরম ভাত না হলে স্বর্গীয় স্বাদের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে।