সজনে ফুলের রকমারি
“ দেখেছি সজনে ফুল চুপে চুপে পড়িতেছে ঝরে”…. গ্রামবাংলার অতি পরিচিত সজনে ফুল কবির কবিতা থেকে রন্ধনশালা সর্বত্রই সমান ভাবে সমাদৃত হয়েছে। সজনে ফুলের বড়া অথবা হারিয়ে যাওয়া বেস্বরী-সবেতেই এই ফুলের স্বাদ এক আশ্চর্য আমেজে ভরা। আজকের লেখায় রইল সেই ফুলের নানান রান্নার রেসিপি।
সজনে ফুলের বড়া
শীতের দিনে মুচমুচে সজনে ফুলের বড়া বাঙালির বড় প্রিয়। কীভাবে এই বড়া বানাতে হবে সেটাই দেখা যাক।
কী কী লাগবে
টাটকা সজনে ফুল-১ আঁটি
ময়দা-১৫০গ্রাম
চালের গুঁড়ো-৫০ গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো-সামান্য
কাঁচালঙ্কা-৪ টে
মৌরি- সামান্য
কালোজিরে- সামান্য
সাদা তেল- আন্দাজমতো
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
কীভাবে করতে হবে
সজনে ফুল ডাঁটা থেকে ছাড়িয়ে জলে বারবার করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ফুল থেকে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। কাঁচালঙ্কাগুলো কুচি করে রাখতে হবে। ময়দা, চালের গুঁড়ো ও নুন ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে হলুদ গুঁড়ো, মৌরি ও কালোজিরে দিয়ে, সাদা তেল ময়ান দিতে হবে। এরপর জল দিয়ে ঘন গোলা করতে হবে। ওই গোলায় সজনে ফুলগুলো আর কাঁচালঙ্কা কুচি মেশাতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে গ্যাস কমিয়ে বড়ার আকালে তেলে দিয়ে আঁচ মাঝামাঝি রাখতে হবে। এক পিঠ মচমচে করে ভেজে উল্টে অন্য পিঠ ভাজতে হবে। আঁচ কিন্তু খুব জোর হলে বড়া ভাল হবে না।
সজনে ফুলের চচ্চড়ি
কী কী লাগবে
টাটকা সজনে ফুল-২ গোছা
যেকোনো চুনো মাছ-৩৫০ গ্রাম
আলু-২৫০ গ্রাম
বেগুন- ২৫০ গ্রাম
শিম-২৫০ গ্রাম
মটরশুঁটি-৩০০গ্রাম
কাঁচালঙ্কা-৫/৬টা
পাঁচফোড়ন-সামান্য
শুকনো লঙ্কা-৩-৪টে
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো-২ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো-স্বাদ অনুযায়ী
আদা-২৫ গ্রাম
কীভাবে রাঁধতে হবে
সজনে ফুলগুলো ডাঁটা থেকে ছাড়িয়ে জলে ভাল করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। বেগুন আর শিম ধুয়ে নিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। শীতকালে নানারকম চুনো মাছ পাওয়া যায়। যে কোনো রকম চুনোমাছ দিয়েই এই রান্না করা যায়। চুনোমাছ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। আলু খোসা ছাড়িয়ে লম্বা লম্বা সরু সরু করে কেটে নিতে হবে। শিমের পাশের সুতো ফেলে আলুর তুলনায় একটু মোটা মোটা করে কাটতে হবে। বেগুন শিমের তুলনায় আর একটু মোটা করে লম্বা ভাবে কেটে নিতে হবে। আদা বেটে রাখতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে চুনো মাছগুলো মচমচে করে ভেজে নিতে হবে। তেল কম মনে হলে আর একটু তেল দিয়ে শুকনো লঙ্কা ও পাঁচফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বের হলে আলুগুলো দিয়ে হালকা ভেজে নিয়ে শিম ও বেগুন দিয়ে ভাজা ভাজা করে সজনে ফুলগুলো দিতে হবে। বেশ ভাজা হলে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো আর আদাবাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করে অল্প জল দিয়ে চুনো মাছ ভাজা দিতে হবে। কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে গ্যাস একটু কমিয়ে ঢাকা দিয়ে অল্পক্ষণ রাখলেই তরকারিগুলো সেদ্ধ হয়ে যাবে। তখন আঁচ বাড়িয়ে একটু শুকিয়ে নিলেই চুনোমাছ দিয়ে সজনে ফুলের চচ্চরি তৈরি। এবার চাই গরম ভাত। তবেই খুলবে স্বাদ।
সজনে ফুলের বেস্বরী
বেস্বরী মানেই হারানো সুবাস। যেদিন ভেসে গেছে কালস্রোতে, সেই হারিয়ে যাওয়া দিন তার হারিয়ে যাওয়া সুবাস নিয়ে ধরা দেয় বেস্বরীর নিজস্ব স্বাদে।
কী কী লাগবে
সজনে ফুল-২ আঁটি
মটর ডাল-২০০গ্রাম
বেগুন-৩৫০ গ্রাম
জিরে-সামান্য
সাদা তিল-৫০ গ্রাম
শুকনো লঙ্কা-২ টো
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো- আন্দাজমতো
কাঁচালঙ্কা-৩-৪ টে
সর্ষের তেল- আন্দাজমতো
ঘি- আন্দাজমতো
চিনি-সামান্য
নুন- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
মটর ডাল রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ডাল বেটে নিতে হবে। একটু দানা দানা বাটা হলে ভালো হয়। বেগুন লম্বা করে চচ্চড়ির মতো করে কেটে নিতে হবে।কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে ডাল বাটা থেকে বড় বড় বড়ার আকারে ভেজে নিতে হবে। বেশ কড়া করে ভাজতে হবে। তেল কমে এলে আবার তেল দিয়ে জিরে, শুকনো লঙ্কা ও তেজপাতা দিয়ে বেগুন দিতে হবে।বেগুন ভেজে তুলে নিয়ে সজনে ফুলগুলো দিয়ে ভাজতে হবে। ফুলগুলো ভাজা হলে বেগুন দিয়ে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো ও নুন দিয়ে মিশিয়ে কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে জল দিতে হবে। ফুটে উঠলে বড়াগুলো আধভাঙা করে দিয়ে তিলবাটা আর চিনি দিয়ে নেড়েচেড়ে জল শুকিয়ে এলে ঘি দিলেই বেস্বরীর সুবাসে মন উচাটন হবেই। তখন গরম ভাতের সঙ্গে শীতের খাওয়া জমতে দেরি হবেনা।