লাল-হলুদ বা চেনা-জানা সবুজ রং যাই হোক না কেন বাজারে সবজি কিনতে নজর পড়বেই। কেনাকাটির লিস্টে না থাকলেও শুধু রং দেখে কতবার জায়গা করে গিয়েছে বাজারের ব্যাগে!
চাউমিন, চিলি চিকেন, পিৎজ্জা থেকে শুরু করে আলুর দম কিংবা বিকেল বেলার চপ মুড়িতেও জায়গা করে নিয়েছে ক্যাপসিকাম। ভাল নাম ‘বেলপেপার’। ক্যাপসিকামকে হিন্দিতে বলে সিমলা মির্চ। ক্যাপসিকাম মূলত দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ফসল। ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা থেকে যাত্রা করার সময় ইউরোপে নিয়ে আসেন এই সবজিটি। ইতিহাস বলে, ক্যাপসিকাম ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে রান্নায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ব্রিটিশরা তাদের রাজত্বকালে ভারতে ক্যাপসিকামের ব্যবহার চালু করেছিল। ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে সিমলা ছিল দেশের রাজধানী। ইওরোপ থেকে ক্যাপসিকামের বীজ এনেছিল ব্রিটিশরা এবং পার্বত্য অঞ্চলে অনুকূল পরিবেশের ক্যাপসিকামের চাষ বাড়তে থাকে।
উচ্চ ফলন আর স্বাদের কারণে এদেশের মানুষ প্রচুর পরিমাণে ক্যাপসিকাম উৎপাদন করতে শুরু করে। ভারতে সিমলায় চাষ করা হয়েছিল, ক্যাপসিকামের নাম হয়ে যায় সিমলার নামে, সিমলা মির্চ।
এই সব্জি স্বাদ আর গন্ধে মানুষের অত্যন্ত প্রিয়, কিন্তু শুধু দর্শনধারী নয় ক্যাপসিকাম দৈনন্দিন পুষ্টির তালিকাতেও বেশ জব্বর এক নাম।
ক্যাপসিকাম অ্যানম গোত্রের ফসল। ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, লিউটিন, কোয়েরসেটিন ইত্যাদি থাকে বলে রোগ প্রতিরোধ-প্রতিকারে এই সবজি বেশ জরুরী। এই লো-ক্যালরি হওয়ায় সবজিতে কোলেস্টেরল কম। পুষ্টিবিদদের মতে লাল ও সবুজ ক্যাপসিকামের মধ্যে লালটি-ই বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন।
লাল ক্যাপসিকামে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। চোখ ভালো থাকে।
সবুজ ক্যাপসিকামে ক্যাপসাইসিনস উপাদান ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয়। এটি ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। এটি মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা নাশ করে। সবুজ ক্যাপসিকাম শরীরের বাড়তি ক্যালরি পূরণে কাজ করে। ফলে চর্বি জমে না, একই সঙ্গে ওজনও বৃদ্ধি পায় না। অণুচক্রিকা উদ্দীপিত করে সংক্রমণ রোধ করে থাকে।
হার্টের অসুখ, আর্থারাইটিস, হাইব্লাডপ্রেশার, অ্যানিমিয়া, রাতকানা নিউরাল টিউব ডিজঅর্ডার, হাইপারলিপিডেমিয়ার মতো অসুখ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ক্যাপসিকাম।
তার সঙ্গে ত্বকের সমস্যা, প্রি ম্যাচিওর এজিং, চুলের সমস্যা এসব সামলাতেও মাঠে নেমে ভাল ব্যাট করতে পারে ক্যাপসিকাম।
তবে নাইটশেড গ্রুপের সব্জিতে অ্যালার্জি থাকলে বা হজমের সমস্যা থাকলে বেল পেপার এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
রান্নার সময় বেশি ভাজলে ক্যাপসিকামের স্বাদ আর গুণ সবটাই গায়েব হয়ে যায়। বেল পেপার স্যালাডে কাঁচা খান অনেকে। পুষ্টিবিদরা বলছেন সেটাই বেশি উপকার। তবে দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখা বেলপেপার নয়।