ঘুমের মধ্যে খারাপ স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার অভিজ্ঞতা প্রায় সকলেরই রয়েছে। ঘুম থেকে উঠে হাতপা অবশ হয়ে যাওয়ার মতন ঘটনাও অনেকেই ফেস করেছেন। ঘুমের মধ্যেই যেমন স্বপ্ন আসে তেমনই আসে দুঃস্বপ্ন। দুঃস্বপ্ন আমাদের উপরে নেগেটিভ প্রভাব বিস্তার করে।দুঃস্বপ্ন অনেক সময় মনে থেকে যায় আবার অনেক সময় ঘুম ভাঙার পরে আর কিছুই মনে থাকে না। স্বপ্ন ভুলে যাওয়াই ভালো। যে স্বপ্ন মনে থেকে যায় সেই স্বপ্নের কারণে সারাটাদিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একটা খারাপ স্বপ্নের প্রভাব শরীরের উপরেও পড়তে পারে। না, আজ আমরা খারাপ স্বপ্নের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবোনা। আজ আমরা জন্য মানুষ খারাপ স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন কেন দেখে? শুধু মানুষ নয় এই পৃথিবীর বুকে বিরাজমান সমস্ত প্রাণীই যেমন স্বপ্ন দেখে তেমন দুঃস্বপ্নও দেখে থাকে। কিন্তু কেন আসে এইজাতীয় স্বপ্ন?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আমাদের সারাদিনের ক্লান্তির অবসান ঘটে ঘুমের মধ্যে দিয়ে। আর এর প্রভাবটাই পড়ে স্বপ্নে। সারাদিনের চিন্তাভাবনা, ক্লান্তি, আনন্দ, দুঃখ সমস্তই ঘুমের সময় অবচেতন মনে ঘুরে বেড়ায়। আর এই অনুভূতিগুলিই ঘুমের সময় দেখা দেয় স্বপ্নের আকারে। দুঃস্বপ্নের সাথে করা অটো সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে যে স্বপ্ন মনে থেকে যায় তাদের মোকাবিলা করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। দুঃস্বপ্ন আবার অনেকপ্রকারের হয়ে থাকে। কিছু কিছু স্বপ্ন আবার আমাদের জীবনকে বেশ প্রভাবিত করেও থাকে। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক কিছু দুঃস্বপ্নের কারণ ও তার ফলাফল.....................
১) অনেকসময়ই আমরা স্বপ্ন দেখি যে আমরা কোনো বদ্ধ জায়গায় রয়েছি। কিছুতেই সেই ঘর থেকে আমরা বেরোতে পারছি না। চাপা অন্ধকার যেন দমবন্ধ করে দিতে চাইছে। সেই সময়েই হঠাৎ চোখ খুলে দেখলেন আপনি নিজের ঘরেই রয়েছেন। এরকম অভিজ্ঞতা প্রায় সকলেরই কমবেশি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরণের স্বপ্ন তখনই আসে যখন মানুষ কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে আটকে গিয়ে থাকে। সারাদিন সেই পরিস্থিতির কথা চিন্তা করার ফলে স্বপ্নেও সেই দুঃস্বপ্নের রেশ থেকে যায়।
২) পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়া কিংবা জলে ডুবে যাওয়া, দুঃস্বপ্নের জনপ্রিয়তার মধ্যে এইগুলি বেশ উচ্চস্তরেই রয়েছে। হয়তো এই পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষই নেই যিনি এই স্বপ্ন দেখেননি।কিন্তু এই স্বপ্ন এতবেশি কেন আসে? কোনো কঠিন পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামাল দিতে না পারলে দুশ্চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক আর সেই দুশ্চিন্তার প্রতিফলন হলো এইজাতীয় স্বপ্ন।এছাড়াও কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও আমরা এইধরণের স্বপ্ন দেখে থাকি।
৩) অনেকসময় আমরা স্বপ্নে এটাও দেখতে পারি যে আমাদের অতি সাধের কম্পিউটার ভেঙে গেলো কিংবা এটাও হতে পারে আপনি দেখছেন আপনার কোনো বিশেষ বন্ধুকে আপনি বারবার ফোন করছেন অথচ সে ফোন তুলছে না। এরকম স্বপ্ন কখন আসে? এইজাতীয় স্বপ্ন আসে যখন আপনার কোন প্রিয় বন্ধু অনেকদিন বাদে হয়তো আপনার সাথে যোগাযোগ করলো। সেই দিন যায়নি এইজাতীয় স্বপ্ন দেখতে পারেন।
৪) কোনো যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন সম্পর্কে ভাঙ্গন কিংবা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনাকেও সূচিত করে থাকে। তাই সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে শুরু করলে এইজাতীয় স্বপ্ন আসতেই পারে।
৫) বিশেষজ্ঞদের মতে, দুঃস্বপ্নের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো এমন স্বপ্ন দেখা যে আপনি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আটকে রয়েছেন। এমন স্বপ্ন দেখার অর্থ হলো, সেই মুহূর্তে আপনার জীবন কোনো একটি কারণে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আপনি তার কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এইজাতীয় স্বপ্ন দেখা অস্বাভাবিক নয়।এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আটকে পড়ার স্বপ্ন আপনাকে এটাও জানান দেয় যে, ভবিষ্যতে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতে আপনি কিভাবে সেই পরিস্থিতি সামলাবেন।
৬) স্কুল ও কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এসেছেন বহুদিন হলো, কিন্তু তাও স্বপ্নে পিছু ছাড়সহ না সেই রিপোর্ট কার্ড।কম মার্ক্স্ পাওয়া কোনো অপছন্দের বিষয় আজও যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে আপনাকে। কিন্তু কেন? এই জাতীয় স্বপ্ন কিসের প্রতিফলন? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই জাতীয় স্বপ্ন সেই প্রশ্ন তুলে ধরে যে আপনি বাস্তবে যা অর্জন করেছেন তা আদৌ আপনার প্রাপ্য ছিল কিনা। সেই প্রশ্নই স্বপ্ন হয়ে আপনার সামনে এসে উপস্থিত হয়ে থাকে।
৭) বাস্তব জীবনে আপনি যদি কোনো মানুষের থেকে নিজেকে বাঁচতে চান যা বুঝতে পারেন তার থেকে আপনার বিপদের আশঙ্কা রয়েছে তাহলে স্বপ্নও আপনি সেইরূপ দেখতে পারেন। স্বপ্নে আপনি এটাও দেখতে পারেন যে কোনো ব্যক্তি আপনার পিছু নিয়েছে এবং আপনি তার থেকে বাঁচার জন্য প্রানপন দৌড়াচ্ছেন। এইজাতীয় স্বপ্ন মনের ভয়কে প্রতিফলিত করে থাকে।
স্বপ্ন অনেক ধরণের হয়ে থাকে। কিছু স্বপ্ন যেমন ভালো হয় সেরকমই কিছু স্বপ্ন আবার খারাপও হয়ে থাকে।খারাপ স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন সাধারণত সেই মুহূর্তে মনের মধ্যে চলতে থাকা ঝড়কে অনেকাংশে প্রকাশ করে থাকে।দুঃস্বপ্ন আমাদের মনে খারাপ প্রভাব ফেলে এটা সঠিক কিন্তু আপনি চাইলেই দুঃস্বপ্ন দেখা আটকাতে পারেন। জানেন কিভাবে? একটা জিনিস খেয়াল করে থাকবেন সকলেই যে, আমরা যখন খুব আনন্দে থাকি তখন দুঃস্বপ্ন দেখলেও তার তীব্রতা খুব বেশি হয় না। কিন্তু যেই মুহূর্তে আমাদের মনে ভিড় করে আসে দুঃখ বা হতাশা সেই সময় দেখা স্বপ্নের তীব্রতাই হয় অন্যরকম।তাই বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সারাদিন দুশ্চিন্তা যত কম করা যায় দুঃস্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা ততটাই কমে যায়। তাই চিন্তা কম করুন দেখবেন দুঃস্বপ্ন জীবন থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।