অধরে বংশী, শিরে শিখীমুকুট, শ্রী কৃষ্ণের মোহন রূপে শুধু একা রাধা মোহিত হননি, গোটা জগৎ মাত হয়েছিল শ্যামরূপে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চিহ্ন ময়ূরপালক আর বাঁশি। শান্তি প্রেম ভালবাসার দ্বারা বিশ্ব জয়ে এই দুই তাঁর মূল অস্ত্র। কোথায় ময়ূরের পালক অঙ্কিত থাকলে আমাদের বলে দিতে হয় না এই চিহ্নটি দ্বারা কী বোঝানো হচ্ছে? বাস্তুশাস্ত্রে ময়ূরের পালক ঘরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। শ্রীকৃষ্ণকে "মর্মকুটধারী" বলে সম্বোধন করা হয়ে থাকে মাথায় এই ময়ূর পালকের জন্য। কিন্তু কীভাবে এক সাধারণ ময়ূরের পালক হয়ে উঠল শ্রীকৃষ্ণের চিহ্ন?
শ্রীকৃষ্ণের মাথায় ময়ূরের পালকের কারণ নাকি পাওয়া যায় রামায়ণে। একাধিক কাহিনি প্রচলিত আছে এই প্রসঙ্গে।
ত্রেতা যুগে ভগবান কৃষ্ণ শ্রীরাম অবতার রূপে জন্মান। রামচন্দ্র যখন লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে সীতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তখন বনের ময়ূররা নাকি পেখম দিয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছিল রামচন্দ্রের চলার পথ। প্রসন্ন হয়ে শ্রীরামচন্দ্র কথা দিয়েছিলেন যে দ্বাপর যুগে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন, তখন ময়ূর পালক স্থান পাবে তাঁর শিরে। সেই কথা রেখেছিলেন তিনি।
আরও একটি কাহিনি শোনা যায়।
দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণ শ্যামবর্ণ। শ্রীকৃষ্ণের রূপ দেখে মেঘের কথা মনে করে নাচ শুরু করে ময়ূরের দল। পেখম মেলে নাচতে থাকে। সেই থেকে শ্রীকৃষ্ণ ময়ূরের পালক মাথায় রাখেন।
আরও এক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে এই ময়ূরের পালক নিয়ে। শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতের নিচে দাঁড়িয়ে একবার বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। এমন সময় কৃষ্ণ মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। মেঘের ডাকে নাচ শুরু করে ময়ূর দল। আর বাঁশি বাজাতে থাকেন বংশীধারী। এরপরই শ্রীকৃষ্ণকে একটি ময়ূরের পালক উপহার দেন ময়ূরদের রাজা। সেই পালকটিই মাথায় রাখেন তিনি।
অপর একটি কাহিনি মতে, একবার গোচারণে গিয়েছিলেন কৃষ্ণ। দুপুরের রোদে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল গোচারী কিশোররা। সঙ্গের পশুকুলও আচ্ছন্ন হয়ে যায় গাঢ় ঘুমে। জেগে থাকে কেবল কৃষ্ণ আর তাঁর বাঁশির সুর। সেখানে উপস্থিত ছিল একদল ময়ূরও। বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে ময়ূরের দলের মধ্যে কয়েকটি ময়ূর বিভোর হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যখন বাঁশির সুর বন্ধ হয়ে যায়, তখন শ্রীকৃষ্ণের কাছে গুরুদক্ষিণা হিসেবে পেখম ঝরিয়ে ফেলেন ময়ূররাজ। একটি পেখম মাথার মুকুটে রেখে কৃষ্ণ কথা দেন, চিরকাল এই পালক তাঁর মাথার মুকুটে শোভা পাবে। সেই থেকে কৃষ্ণের মুকুটে সবসময় শোভা পায় ময়ূরের পেখম।
আরও এক কাহিনি প্রচলিত আছে। সম্পর্কে নাকি শ্রীকৃষ্ণ কার্তিকের মামা হন। আর কার্তিকের বাহন ময়ূর। ভাবা হয় এই কারণেই তিনি কার্তিকের বাহনের পালক মাথায় রাখেন। যাতে দেবসেনাপতি তাঁর মস্তকে থাকেন আর তিনি সব যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারেন।
প্রাথমিকভাবে ময়ূরের পালকে রয়েছে সাতরঙা ছটা। শ্রীকৃষ্ণের মাথায় মুকুট থাকা মানে জীবনের সব রঙ ধারণ করার প্রতীক।