দুষ্টু লোকদের ভ্যানিশ করবে মিস মার্পল-মিতিন মাসি আর রাঙা পিসিমা

মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবা মারা যায় সাহসী মেয়েটার। প্রাথমিক  শিক্ষার পাঠ নেওয়া সবে শুরু হয়েছে। স্কুল ছেড়ে দিতে হয়। মেয়েটার বাবার ওপরেই নির্ভরশীল ছিল সম্পূর্ণ পরিবার। আর্থিক দুরবস্থায় পড়ে মেয়েটাকে স্কুল ছাড়তে হয়। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ মেয়েটাকে দমে যেতে দেয়নি। মায়ের কাছেই প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিতে শুরু করে মেয়েটা। সময়টা তখন ঊনবিংশ শতক। একবার সেই মেয়েটির কয়েকজন ছেলে বন্ধু মিলে মেয়েদের বুদ্ধির বিষয়ে হাসাহাসি করেছিল। মেয়েরা নাকি গোয়েন্দা গল্প সাজাতে পারে না। এই উপহাসে ভীষণ রেগে যায় মেয়েটা। চ্যালেঞ্জটা নিয়ে মনে মনে মেয়েটা লিখে ফেলেছিলেন ‘দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার অ্যাট স্টাইলস’। যদিও লেখার পরে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল লেখিকাকে। ছ’জনেরও বেশি প্রকাশক পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে হাল ছাড়েননি মেয়েটি। ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল উপন্যাসটি। জন লেইন উপন্যাসটি ছাপতে রাজি হয়েছিল । তবে তার বিনিময়ে সেই মেয়েটাকে ছাড়তে হয়েছিল এই লেখার বিষয়ে নিজের কপিরাইট। কে সেই মেয়েটা? রহস্য সাহিের রাণী আগাথা ক্রিস্টি। হিসেবটা তবে বদলায় তাড়াতাড়ি। আগাথা ক্রিস্টির সৃষ্টি এরকুল পিয়ারো রহস্য-সাহিত্যের এক নতুন দিশা খুলে দেয়।বেলজিয়ামে নার্স থাকাকালীন সেই নার্সের আদলেই গড়ে তুলেছিলেন এরকুল পেয়ারোকে।

১৯২০ সালের পরবর্তী সময়টায় আগাথা ক্রিস্টি কিছু রোমান্টিক উপন্যাস লিখতে শুরু করেছিলেন। লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি তাঁর প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন ছদ্মনামে। ম্যারি ওয়েস্টকোট নামে ছটি রোমান্টিক উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি। তারপর আগাথা ক্রিস্টি নামে লিখতে শুরু করেন। আগাথার এরকুল পেয়ারো ছিলেন অন্যরকম একটি গোয়েন্দা চরিত্র। কোন ছোট ক্লু যেমন পায়ের ছাপ বা সিগারেটের ছাই দেখে তিনি গোয়েন্দাগিরি করতেন না। মস্তিষ্কের অস্ত্রের ওপরেই মূলত বিশ্বাস রাখতেন। এই অস্ত্রের উপর ভিত্তি করেই বেশিরভাগ রহস্য উদঘাটন করতেন।

তবে নারী গোয়েন্দা হিসেবে যাকে আইডিয়াল বা আদর্শ মানা হয় তিনি ছিলেন মিস মার্পল। আগাথা ক্রিস্টির মতে তিনি তাঁর জীবনে যত বৃদ্ধা মহিলা দেখেছেন তাঁদের সবচেয়ে বুদ্ধিমতী ও বাস্তববাদী মনে হয়েছে তাঁর। মিস মার্পেলের পুরো নাম ছিল মিস জেন মার্পেল। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, সাহসী এই মহিলা ও নিজের বুদ্ধিমত্তার জোরেই রহস্য সমাধান করতেন। প্রায় ২৭টিরও বেশি উপন্যাস লেখা হয়েছে মিস মার্পেল এবং তাঁর রহস্য সমাধানকে কেন্দ্র করে। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী  আগাথা ক্রিস্টির বই সর্বাধিক বিক্রি হয়েছে।

যে সময়ে এই গোয়েন্দা লেখিকা লিখতে শুরু করেছিলেন, সেই সময়ে মেয়েরা পিছিয়ে থাকা সমাজেরই প্রতিনিধি। সেখান থেকে বাংলা সাহিত্যে নারী গোয়েন্দা হিসেবে মেয়েদের উঠে আসা একপ্রকার উত্তরণকে চিহ্নিত করে। সেই উত্তরণের পথিকৃৎ মিস মার্পেল এরকুল পেয়ারও মতো চরিত্ররা। এমন খোলা দরজার দিকে এগিয়ে দেওয়া এই লেখিকা এবং তার সৃষ্ট চরিত্রের নাম বিশ্ব সাহিত্যে আজও উজ্জ্বল।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...