মাটি রঙের ধোঁয়া ধোঁয়া ঢেউ তার গা ঘেঁষে ঘন নীল। বিন্দু বিন্দু আলোর বিন্দু। চোখ টেনে নেয় আলোর রেখা। শান্ত, সমাহিত।
অন্য এক দৃশ্যে দেখা যায়, কৃষ্ণ কালো আধাঁর। তার মধ্যে আলোক রশ্মির ঢেউ। এই আলোর সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয় বহূদূর সরে মাটির পৃথিবীর জটিলতা, বেঁচে থাকার সংঘাত। যুদ্ধ, রক্তপাত, ক্ষমতার লড়াই তুচ্ছ হয়ে যায় এই আলো আর মায়াবী অন্ধকারের সামনে।
এই দৃশ্য দক্ষিণ গোলার্ধের একফালি আকাশের ছবি। সৌজন্যে নাসা। গত দু’দিন ধরে এমনই সব ছবি আলোড়ন তুলেছে গোটা বিশ্বে। সাধারণ মানুষ থেকে বিজ্ঞান মহাকাশবিদ উচ্ছ্বাসিত সকলেই। বহুদিন পর যুদ্ধ-দাঙ্গা-ভয় বিধ্বস্ত পৃথিবী এভাবে আলোড়িত মহাজাগতিক রহস্যে।
নতুন জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা মহাবিশ্বে ১৩০০ কোটি বছর আগের প্রথম ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা। মহাজগতের বয়স ধরা হয় ১৩৮০ কোটি বছর।
নাসার গবেষক বিল নেলসন জানিয়েছেন, "আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আর এই ছবিতে আপনি ছোট ছোট যে আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে পাচ্ছেন, সেগুলো ভ্রমণ করেছে ১৩০০ কোটি বছর,"
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই ছবি এটা বিশ্বের প্রামাণ্য প্রাচীনতম ছবি।
এই ছবি পাঠিয়েছে সবচেয়ে শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। নাসা, কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং ইউরোপিয় স্পেস এজেন্সির মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরী। ওয়েব টেলিস্কোপ সাড়ে ১২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে এই ছবি তুলেছে।
২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। ৬.২ টন ওজনের এই টেলিস্কোপ হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি। এখন পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। খরচ হয়েছে ১০০০ কোটি ডলার।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নাম করণ করা হয়েছে জেমস এডউইন ওয়েবের নাম অনুসারে। নাসার দ্বিতীয় প্রশাসনিক প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৮ দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। তাঁর উদ্যোগেই এক সময় ‘লার্জ স্পেস টেলিস্কোপ’ তৈরির কাজ শুরু হয়। পরে যার নাম হয় ‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ’। তাঁরই স্মরণে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপের নাম স্থির হয় জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।
ছবিঃ গুগল
তথ্য সূত্রঃ নাসা, বিবিসি