ইসলামে রমজান মাস পবিত্র কেন?

রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের আগমনী চাঁদ দেখে শুরু হয় খুশির ঈদ। এই ঈদের সঙ্গে তাই যেমন জুড়ে আছে রমজান মাস, তেমনি জুড়ে আছেন নবী হজরত মহম্মদ আর পবিত্র কোরাণ। 

আরবের খুবই গরীব এক পরিবারে জন্ম হয়েছিল হজরত মহম্মদের। জন্মের আগে তিনি হারিয়েছিলেন বাবাকে। তাঁকে জন্ম দিয়ে মা আমিনা বেগমের শরীর এমন ভেঙে গেল যে, আর তিনি কোনদিনই আগের স্বাস্থ্য ফিরে পেলেন না।

সেকেলে আরবের বেদুইন নারীরা অর্থের বিনিময়ে অন্যের সন্তান মানুষ করত। কিন্তু, মা আমিনার হাতে একেবারেই তাদের দেবার মতো কিছু ছিল না, তাই কেউ আর রাজি হচ্ছিল না মহম্মদকে বড় করার দায়িত্ব নিতে। শেষে হালিমা নামের এক বেদুইন নারীর মায়া হল। মহম্মদকে লালনপালন করার জন্য নিয়ে গেল। 

মহম্মদের যখন চার বছর বয়স হল, তখন হালিমার কোল থেকে মায়ের কাছে ফিরে এলেন। কিন্তু, ফিরে এসেও বেশিদিন মায়ের স্নেহসুখ পেলেন না তিনি। ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই মদীনায় মামার বাড়ি গেলেন মায়ের সাথে। ফেরবার পথে 'আব্বা' নামের এক জায়গায় এসে হঠাৎ করে মা মারা গেলেন। মাথার উপর থেকে বাবা-মা দু'জনেরই স্নেহের ছায়া একে একে সরে গেল।

মহম্মদ আশ্রয় পেলেন মামারবাড়িতে। মহম্মদের শৈশবটা খুব কষ্টের, খুব দুঃখের। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞতাময়ও বটে। এই সময়টা কাটতে লাগল তাঁর মামারবাড়িতেই। যাই হোক, তার মধ্যেই মহম্মদের যখন পঁচিশ বছর বয়স হল, তখন ধনী বিধবা খাদিজার সাথে তাঁর বিয়ে হল। 

সেই সময় আরবে চলত ঘোরতর মূর্তি পূজা। কাবার মন্দিরেই ছিল তিনশো ষাটটি মূর্তি। বেগম খাদিজা ছিলেন ইহুদী। ধর্মমতে তিনি ছিলেন মূর্তি পূজার বিরোধী। একেশ্বরবাদী। মূর্তি পূজকদের নানান নৃশংস আচার দেখে তিনি এই উপাসনা পদ্ধতির প্রতি আরও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। ধর্মভাবনার মন ও মানসিকতায় স্বামী-স্ত্রীর অসম্ভব মিল ছিল।

কারণ, ছোট থেকেই মহম্মদও চোখের সামনে এইসব নৃশংসতা দেখে মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী হয়ে উঠেছিলেন। বহুত্বের চেয়ে হয়ে উঠেছিলেন একের উপাসনার পক্ষপাতী। অনেকের মাঝে একজন যদি সর্বশক্তিমান হন, তাহলে শুধুমাত্র তাঁরই উপাসনা কেন করব না--এই ভাবনা থেকেই দৃঢ় হল তাঁর একেশ্বরবাদের ভিত্তি।

সেই এক ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে তিনি হীরা পর্বতের গুহায় গিয়ে একান্তে সাধনা করতে শুরু করলেন। একটু একটু করে বহু কাল চলে গেল। অবশেষে একদিন ঈশ্বর বা আল্লাহ্-র দূত জিব্রাইল এসে দেখা দিলেন তাঁকে। শোনালেন পবিত্র কোরাণের প্রথম বাণী–‘ইক্রা-বি-ইম্মি-রব্বিক’। এর মানে, ‘নিজের প্রভুর নামে পড়ো ‘। 

আল্লাহর বাণীটি নবীর হৃদয়ে যে রাতে আবির্ভূত হল, সেই রাতটিকে বলা হয়, ‘শবে কদর’। রাতটি ছিল ইসলামী ক্যালেণ্ডারের নবম মাস ‘রমজান’-এর রাত। তাই এই মাসটি সমস্ত ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে খুবই পবিত্র, খুবই আদরের। তাই এই মাসটি সমস্ত ইসলাম ধর্মের মানুষ রোজা রেখে আল্লাহর চিন্তায় পবিত্র জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে ব্রত রাখেন এবং এই ব্রত উদযাপন শেষ করেন ঈদ উৎসবের মধ্য দিয়ে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...