প্রথম 'স্বাধীনতা দিবস' থেকে 'প্রজাতন্ত্র দিবস': ২৬ জানুয়ারির কাহিনি

তখনও ভারতবর্ষ ভাগ হয়নি। কারণ, তখনও সে স্বাধীন হয়নি। স্বাধীনতা আদায়ের জন্য সহিংস ও অহিংস দুই পথেই লড়াই চলছে জোরকদমে। তার পাশাপাশি স্বাধীনতার নামে দেশটাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার বীজ ইংরেজের শাসক শিবিরও ব্যাপকভাবে স্টোর করছে, আর কিছুকাল পর ছড়াতে শুরু করবে বলে। কারণ, সেটা ১৯২৯ সাল।

এ-রকম একটা সময়ে গান্ধিজির পছন্দের ‘আপোষ নীতি’ নিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের ভেতরেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ঝড় উঠল। ডিসেম্বরে লাহোরে ডাকা হল জাতীয় কংগ্রেসের ইয়ারলি অধিবেশন। সভাপতি হলেন, জওহরলাল নেহেরু।

৩১ ডিসেম্বরে এই অধিবেশনেই প্রথম ‘পূর্ণ স্বরাজ’ বা ‘পূর্ণ স্বাধীনতার’ দাবি তোলা হল। এই দাবি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে এ-দিন মধ্যরাতে রাভী নদীর তীরে জাতীয় কংগ্রেসের তেরঙা পতাকা তোলা হল উপস্থিত হাজারখানেক মানুষের অভিন্দনের মধ্য দিয়ে। তখন কে জানত, একদিন এই ‘মধ্যরাতে’ই আমাদের বিধিলিপি লেখা হবে!

শুরু হল দেশজুড়ে শাসক-বিরোধী আইন অমান্য আন্দোলনের প্রস্তুতি। জওহরলাল ঘোষণা করলেন, দেশের ঘরে ঘরে স্বধীনতার দাবিকে পৌঁছে দিতে ১৯৩০-এর ২৬ জানুয়ারি ‘পূর্ণ স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে।

 

RepublicDay1

 

পথের দাবি, আন্দোলন, লাঠির ঘাত, কারাগার, দ্বীপান্তর, ফাঁসির দড়ি, সশস্ত্র সংগ্রামের রক্ত পিছল পথ ধরে বছর ঘুরল। এলো ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ। এলো ২৬ জানুয়ারি। জওহরলাল তাঁর কথা রাখলেন। দেশের গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে এ-দিন পূর্ণ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মাথা উঁচু করে হাওয়ায় ডানা মেলল ভারতের তেরঙা জাতীয় পতাকা। দেশবাসী শপথ নিল ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’-র। স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগেই, পালিত হল দেশের প্রথম ‘স্বাধীনতা দিবস’। সেই শুরু।

তারপর আরও সতেরোটা বছর ধরে চলল স্বাধীনতার জন্য আপোষহীন লড়াই। সেই সঙ্গে প্রবল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বপ্নটিকে কোজাগরীর ব্রতের মতো জাগিয়ে রাখতে প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারিতে পালিত হতে লাগল ‘স্বাধীনতা দিবস’

তারপর একদিন ব্রত-অপেক্ষার অবসান হল। এলো ১৯৪৭ সাল। এ-বছর সত্যি সত্যিই স্বাধীনতা এলো। প্রয়োজন হল, স্বাধীন দেশের নিজস্ব সংবিধান রচনার। বাবাসাহেব আম্বেদকরের নেতৃত্বে সে-কাজও শুরু হয়ে গেল অবিলম্বে। শেষ হল, ১৯৫০-এর ২৪ জানুয়ারি।

সেই সঙ্গে, ২৬ জানুয়ারি-দেশের ‘প্রথম স্বাধীনতা দিবস’ পালনের দিনটিকে আরও মহান করে তুলতে, এ-দিনই সারা দেশের জন্য সংবিধান কার্যকর করার কথা ঘোষিত হল। ভারত শিরোপা পেল ‘প্রজাতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রের। ফলত, এই দিনটি একাধারে যেমন ভারতের ‘প্রথম স্বাধীনতা দিবস’, অন্যদিকে তেমনি ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’-হিসেবেও সমগ্র দেশবাসীর হৃদয়ে নন্দিত হল।

প্রজাতান্ত্রিক ভারতের প্রতিটি নাগরিককে ২৬ জানুয়ারি ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দেয় সমস্ত সাংবিধানিক অধিকারের কথা। রবির ভাষায় ঘোষণা করে: 'আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে'। বারে বারে মনে করিয়ে দেয়, 'আমরা' আছি, তাই এই দেশ আছে; 'মা যা ছিলেন, মা যা হইয়াছেন, মা যা হইবেন'-তার মূলে সেই 'আমরা'-ই। সেই জন্যই এই দিনটির প্রতি আমাদের এত সমীহ, এত শ্রদ্ধা...

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...