বাড়িতে পোষ্য রাখতে মোটামুটি সকলেই পছন্দ করেন। কিন্তু যে জিনিসটা অনেকেই পছন্দ করেন না তা হলো, পোষ্যের লোম ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা। পোষ্যদের মধ্যে বেশিরভাগ বাড়িতে সারমেয় রাখতে পছন্দ করে থাকে। আর সারমেয়দের ক্ষেত্রে লোম পড়ার ঘটনাটি একটু বেশি চোখে পড়ে অন্য পোষ্যদের তুলনায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বছরে একটা সময়ে সারমেয়র তাদের সমস্ত লোম ঝেড়ে ফেলে। সেইসময় ঘরের আনাচে কানাচে লোম পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বছরের বাকি সময়েও যদি লোম পাওয়া যেতে থাকে তাহলে সেই পোষ্যের কোনো অসুখ হয়েছে বলেই ধরে নেওয়া হয়। পোষ্য দুশ্চিন্তায় থাকলে সেইসময় তাদের লোম ঝরতে শুরু করে। সারমেয়দের একটি রোগ হয় অ্যালোপেশিয়া। এই রোগটি মূলত সারমেয়দের লোম পড়ে যাওয়া এবং নতুন লোম না গজানোর সমস্যাকে বোঝায়। যেহেতু অনেকের বাড়িতেই পোষ্য হিসেবে সারমেয়কেই রাখতে পছন্দ করেন বেশিরভাগ লোক কিন্তু পোষ্যের লোম ঝরে যাওয়ার সমস্যা কেন হচ্ছে বুঝতে পারেননা। ছুটে যেতে হয় ডাক্তারের কাছে। চলুন আজ সংক্ষেপে পোষ্যদের এই বিশেষ রোগটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক.................
আগে যেমন বলা হয়েছে, অ্যালোপেশিয়া রোগটি সারমেয়দের লোম ঝরে যাওয়া সংক্রান্ত একটি রোগ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগটি শুধু লোম ঝরে যাওয়াকেই সূচিত করে না। এর সাথে সারমেয়র নতুন লোম ওঠার সমস্যাকেও বোঝায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক একধরণের মেডিক্যাল ডিসঅর্ডার পোষ্যের লোম ঝরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেইসব রোগগুলি হলো, কাশিং'স ডিজিজ, অ্যাডিসন'স ডিজিজ, হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপারথাইরয়েডিজম প্রভৃতি রোগ। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ, কিছু ওষুধ, শরীরে হরমোনের পরিবর্তন প্রভৃতি এই রোগের জন্য দায়ী হয়ে থাকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যেসমস্ত হরমোন লোমের ওঠা ও ঝরা নিয়ন্ত্রণ করে তারা সূর্যের তাপ ও আলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। হরমোনের কারণেই বছরে একবার পুরোনো লোম ঝরে গিয়ে নতুন লোম ওঠার ঘটনা ঘটে থাকে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যেইসব সারমেয়র শরীরে রক্ত সঞ্চালন খুব ভালো তাদের শরীরে লোমের আধিক্য দেখা যায়। ত্বকে নানা ধরণের সংক্রমণ হলে তা থেকে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ অ্যালোপেশিয়া হতে পারে। অ্যালোপেশিয়া আবার অনেকধরণের হয়ে থাকে। ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে অ্যালোপেশিয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে শরীরের কোনো একটি জায়গা থেকে গোলাকার হয়ে লোম ঝরে যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল ফলিকিউলাইটিসের কারণে মাল্টিফোকাল অ্যালোপেশিয়া হতে পারে। এছাড়া অনেক সারমেয় থাকে যারা নানা কিছু থেকে অ্যালার্জির শিকার হয়ে থাকে। খাবার, ঘরের আসবাব যেকোনো কিছু থেকেই তাদের অ্যাল্যার্জি হতে পারে। এই অ্যাল্যার্জি থেকে অ্যালোপেশিয়া হতে পারে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সারমেয়দের লোম ভালো রাখতে গেলে তাদের প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও নিট্রিয়েন্টসযুক্ত খাবার দিতে হবে। ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রয়োজন হয় সারমেয়দের। এতে লোম ভালো হয়। এছাড়াও প্রতিদিন সময় করে লোম আঁচড়ানো উচিৎ।বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পাশের বাড়ির কোনো পোষ্যে একটি ওষুধ খাচ্ছে সেই দেখাদেখি নিজের পোষ্যকেও ওই একই ওষুধ খাওয়ানো কখনোই উচিত নয় যতই দুইজনের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ এক হোক না কেন। অনেকসময়ই দেখা যায় নানা ওষুধপত্রের কারণে লোম ঝরে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায় সারমেয়দের মধ্যে। লোম ঝরে যাওয়ার সমস্যা খুব বেশি হলে পোষ্যকে অবশ্যই একবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন।