বৃন্দাবনভূমিতে পা দিলেই ‘রাধে রাধে’ বোলে মেতে ওঠে মন। বৃন্দাবন, মথুরা হোক বা মায়াপুর নবদ্বীপ সবখানেই শ্রীরাধিকার নামে চলে সম্ভাষণ। কৃষ্ণনামে জগৎ মাতে, কিন্তু কৃষ্ণভূম মাতে শ্রীরাধার নামে। যার অর্থ "রাধার মহিমা"।
বাড়ির দেওয়ালে, গাছের গুঁড়িতে এবং ব্রজ অঞ্চলের পুরোহিত ও ভক্তদের পোশাকে লেখা রাধে রাধে শব্দটি সাধারণভাবে দেখা যায়। আসলে সব কৃষ্ণধামেই শ্রীরাধিকার গুরত্ব কৃষ্ণের থেকেও বেশি। তিনি শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি। এই হ্লাদিনীর এক পরিণতি প্রেম। যে প্রেমের পরিণতি মহাভাবে। প্রেমিকা রাধা মহাভাবের স্বরূপা। তিনি পরাশক্তি। মধুরভাবের ভক্ত। দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর-এই চার ভাবের মাধ্যমে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের ভজনা করেন। চারভাবের মধ্যে শৃঙ্গার বা কান্তাভাবই শ্রেষ্ঠ।তাই একে ‘মধুর রস’ বলা হয়। মধুর রসে উল্লাস সবচেয়ে বেশি। রাধা ও কৃষ্ণের মধ্যে যে আকর্ষণ সেখানে আসক্তি নেই। এই প্রেম নিত্য। তা কখনও ক্ষীণ হয় না, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাঁর রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ মাধবের পঞ্চেন্দ্রিয়কে আনন্দিত করে। তাই বৃতাঁরন্দাবনের কানহাইয়ার কাছে শ্রীরাধা অধিক গুণবতী। রাধার সেবক কৃষ্ণ। শ্যামকে ধরা দিতেই হয় রাই-এর কাছে। কালের খেলা তাঁদের আলাদা করতে পারেনি।
বৃন্দাবনে যিনি শ্রীকৃষ্ণ বাংলার নবদ্বীপধামে তিনি ভক্তদের গিরি গোবর্ধন। জয় গৌর নামে মুখরিত হয় ধামভূমি। কৃষ্ণ-কৃষ্ণ আর রাধে রাধে নামে বিহ্বল হয় ভক্তরা।এ ডাক এমন যে একবার কানে গেলে পাষাণ হৃদয়ও বিগলিত হয় প্রেমরসের ধারায়।
কৃষ্ণপ্রেমে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন রাধা। শ্রীকৃষ্ণের মথুরা গমনের পর তাঁর পরিণতির কথা ভক্তরা যত না জানে তার চেয়েও বেশি জানে কৃষ্ণের জন্য তাঁর অপেক্ষার কথা। ব্যাকুল বাঁশির ডাকে সাড়া দিয়ে কীভাবে আঁধার রাতের ঝঞ্ঝা পেরিয়ে শ্যামকুঞ্জে মিলিত হতে যেতেন তিনি। ভক্ত আর ভগবানের অনুপম মিলন কাহিনিতে ভক্তের কৃচ্ছসাধনের জয় হয়, কারণ সেই পথেই ঈশ্বর নেমে আসেন মাটির ভুবনে। তাই কৃষ্ণভূমে রাধে নামের মাধুকরীতেই মেতে ওঠে ভক্তরা।