বাড়ির বাইরে তাঁর পা পড়লেই আমজনতার স্রোত বয়ে চলে যেত। তিনি মহানায়ক উত্তম কুমার। তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতেন বহু অনুরাগীরা। সেইসময় বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তিনিই ছিলেন ‘স্টার’। বাঙালির ম্যাটিনি আইডল।
রূপোলী পর্দার স্টার যদি বার বার জনসমক্ষে আসে তাহলে সেই ‘ক্রেজ’টা থাকে না!
ঠিক এমনটাই মনে করতেন তিনি। একবার এই কারণেই তাঁর সহকর্মী তথা ভ্রাতৃপ্রতিম শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে বকুনি দিয়েছিলেন। কি করেছিলেন তিনি জানেন? পেট্রল পাম্পে গাড়ি থেকে শুধু নেমেছিলেন তিনি। নামতেই ভীড় ঘিরে ফেলে তাঁকে। এইরকম ঘটনার মুখোমুখি বহুবার হয়েছেন মহানায়ক। ফলে, স্বেচ্ছায় তিনি কখনই জনসমক্ষে আসতে পছন্দ করতেন না।
কিন্তু সেইসময় তো ভোট হতই। ভোট মানেই সেখানে আমজনতা হোক কিংবা তারকা, সবাই এক। বুথের কাছে কোনও ভাগাভাগি হয়না! এইদিন ভারতের সবাই ভোট কেন্দ্রের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের ভোট দেন। তাহলে তখন কী করতেন উত্তম কুমার? কীভাবে দিতেন ভোট?
শুনলে বেশ অবাক হবেন আপনি, মহানায়ক উত্তমকুমার নাকি জীবনে কোনও দিনও ভোটের লাইনে দাঁড়াননি। শুধু তাই নয়, এইদিন বাড়ি থেকে একবারের জন্যেও ভোট কেন্দ্রে যেতেন না তিনি।
তাহলে কী মহানায়ক ভোট-ই দিতেন না?
একদমই না, তিনি ভোট দিতেন। তবে, তাঁর জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। কী সেই বিশেষ ব্যবস্থা?
সম্প্রতি সেই বিশেষ ব্যবস্থার কথাই এক সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে উত্তম কুমারের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই গল্প।
গৌরব তাঁর ঠাকুরদা উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়কে কোনওদিনও সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েনি। তাঁর জন্মের অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন মহানায়ক। এই গল্পটা পরিবারের সদস্যদের মুখেই শুনেছিলেন গৌরব, যে মহানায়ক কখনও বুথে ভোট দিতে যেতেন না। তিনি নাকি বাড়ি থেকে খামে ভরে তাঁর ভোট জমা দিত। অর্থাৎ সরকারি কর্মীরা যেভাবে পোস্টার ব্যালটে ভোট দেন, ঠিক সেভাবেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতেন মহানায়ক উত্তম কুমার।
জানা গিয়েছে মহানায়ক এই বিশেষ সুবিধে পেতেন কারণ অভিনেতা হওয়ার আগে তিনি ছিলেন পোর্ট ট্রাস্টের চাকুরিজীবী। পরবর্তীকালে অভিনয়ের জন্য সেই চাকরি ছেড়ে দেন। তবুও তৎকালীন সরকার তাঁর জন্য এই বিশেষ ব্য়বস্থা বহাল রেখেছিলেন।
কারণ এটা সবাই জানত যে বুথে যদি ময়ানায়ক পা রাখেন তাহলে সেখানে জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ভোট কেন্দ্রে ক্রাউড (ভিড়) ম্যানেজমেন্টের কাজে অসুবিধে ঘটতে পারে। তাই সেই বিশৃঙ্খলা না হয়, সেই কথা মাথায় রেখে উত্তম কুমারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা বহাল রেখেছিল সেইসময়েকার ক্ষমতাসীন সরকার।