দ্রুত ইন্টারনেট আর দ্রুত বিনোদন। অনেকদিন থেকেই আস্তে আস্তে টিভির পাঠটা চুকছে, ফোনে 'হাই রিসোলিউশনে ' সিনেমা থেকে খেলা, সিরিয়াল থেকে সিরিজ সবই হাতের কাছে। বিনোদনটাও তাই ফোনের মধ্যে থেকেই হাতছানি দিচ্ছে। যখন web series নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই হয় তখন মাথায় আসে অনেক নাম। কিন্তু শ্রেষ্ঠ বললে সীমানা কম হয়ে আসে। আপাতত উপরের যে নামটা জ্বলজ্বল করছে সেটা 'game of thrones '.
GOERGE R .R .MARTIN -এর লেখা বই 'song of ice and fire' থেকে তৈরী game of thrones . মূল কাহিনী না বলে বলা যাক কিসের ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে সিরিজটা। মোটকথায় সম্পর্কের ও ক্ষমতার টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে সিরিজটি চলে। তারমধ্যে ভাসতে থাকে উদ্দেশ্য, একটি আসনের উদ্দেশ্য। দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য হলো সামনে থাকা থ্রোন টি। থ্রোনের চেহারা গায়ে শিহরণ জাগায়। যদি সিরিজটাকে একটি সিংহাসনকে ঘিরে দ্বন্দ্বযুদ্ধের খেলা ভাবেন তাহলে সেটা ভুল ভাববেন। কাহিনীটা অনেক জটিলতায় ভর্তি। মূল কাহিনীকে সূত্র করে উপকাহিনীগুলো বিস্তার করে। সিরিজটির প্রধান উপাদান হলো এর চরিত্র। প্রত্যেকটি চরিত্রের ছায়া খুব নিপুণ ভাবে তৈরী করা হয়েছে।
চরিত্রের বৈষম্য ও গভীর ছায়া :
অন্যসব কাহিনীতেই একটি মুখ্য চরিত্র ও কিছু প্রধান পার্শ্ব চরিত্র থাকে। তবে game of thrones বহু চরিত্র নিয়ে তৈরী , প্রত্যেকটা চরিত্রই সমান মূল্যবান ও এক কথায় অসাধারণ। কৌশলী 'লিটল ফিঙ্গার ' থেকে গোপন ও অনন্য 'ভ্যারিস', আবার দায়িত্ববান 'স্টার্ক' থেকে আবার 'ল্যানিস্টার' নামের তালিকা অনেক তবে আসনকে জেতার খেলায় লাগে চাতুরী, লাগে বুদ্ধি নো ক্ষমতা। তবুও কিছু চরিত্র যেন আমাদের মন জিতে নেয়। অন্যতম হল 'টিরিয়ন', সে তার পরিবারের সবচেয়ে হাস্যকর সদস্য। বঞ্চনা ও পঙ্কিলতার মাঝেও নিজের ব্যক্তিত্বকে সে ধীরে ধীরে তৈরী করেছে। বইকে নিজের সাথী বানিয়েছে , পড়েছে ও জেনে গেছে।বামন বলে সন্মান পায়নি সে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে খুব মূল্যবান চরিত্র হয়ে ওঠে। খানিক হাসি ও বিদ্রুপে ভরা চরিত্রটি খুব কাছের হয়ে গেছে। তার একটি অন্যতম সংলাপ যা মনের মধ্যে গাঁথা - ' all dwarfs are bustard in their fathers eyes ' .
প্রত্যেকটা চরিত্রের অবয়ব অন্যরকম। কোনো চরিত্র যে নির্দিষ্ট ভাবে ভাবে ভালো বা মন্দ তা বলা যায় না। চরিত্রগুলি তাদের নিজের ধর্ম অনুযায়ী বিচার্য। কিছু চরিত্র ছাড়া প্রায় সব চরিত্রেরই একটা কালো অতীত বা গোপন কথা রয়েছে যা ঘটনাগুলিকে আরো চমৎকার করে তোলে।
আকস্মিক ঘটনা :
নেড স্টার্ক এর মৃত্যু হলো দর্শক হিসেবে প্রথম ধাক্কা। এর পরে আরো অনেক আকস্মিক ঘটনা আসবে যা চোখ বড় করেও দেখা যাবে না। দুই আঙুলের ফাঁক দিয়ে দেখাটাই প্রযোজ্য বলে মনে হয়। বলা যায় সিরিজটাই যেন আকস্মিক ঘটনায় ভর্তি। সাতটা সিজন জুড়েই উত্তেজনা।
সিরিজটি শেষ সিজন এপ্রিলের ১৪ তে আসছে। শিল্পের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পরেও যদি কোনো বিভাগ খালি থাকে তবে তাতেই সিরিজটিকে ফেলা ঠিক। টাইটেলে ট্র্যাক থেকে শুরু করে v .f .x ও গ্রাফিক্স কাল্পনিক পরিবেশকে বাস্তবিক ভাবে তুলে ধরেছে। শুধু মাত্র পরিবেশ নয় এমনকি নিপুনভাবে তৈরী করেছে একটি ভৌগোলিক মানচিত্র যা প্লটগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
সিরিজটির শেষ সিজন আশা করছি সব প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে যাবে।