অদিতি শব্দের অর্থ হল মুক্ত। বন্ধনহীন। অন্য অর্থে অনন্য এবং সীমাহীনের স্বরূপ।
বেদ অনুসারে, অদিতি হলেন সব জীবনের অভিভাবক এবং সমস্ত প্রাণীর সমর্থক। অদিতি দেবমাতা। হিন্দু বিশ্বাস যখন পৃথিবীর জন্ম হয়নি তখন বিশ্বকে জঠরে ধারণ করেছেন মহাদেবী অদিতি। তাঁর থেকেই জন্ম হয়েছিল মহাবিশ্বের। ঋগবেদের বিভিন্ন সুক্তোয় ৮০ বার উল্লেখিত হয়েছে অদিতির নাম। জীবের জন্ম-মৃত্যু-পুনর্জন্ম এই বৃত্তজ্ঞান প্রসঙ্গে। সকল দেবতার মাতা অদিতি। তাঁর সহদরা দিতি অসুরকূলের মাতা। একটি মত বলে অদিতি ব্রহ্মার স্ত্রী রূপ।
অদিতির পুত্র দেবরাজ ইন্দ্র। তাই তাঁকে ‘দেবমাতা’ বলা হয়। তাঁর সূত্রেই বাকি দেবতার জন্ম। প্রকৃতপক্ষে, ৩৩ পুত্রের জননী তিনি। তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে বলা হয় আদিত্য। ১১ জনকে রুদ্র, ৮ জনকে বসু এবং বাকি ২ পুত্রকে বলা হয় অশ্বিনী কুমার।
দেবী অদিতি সেই ৩৩ পুত্রই আজ হিন্দুদের ‘তেত্রিশ কোটি’ দেবী দেবতা। আসলে সংস্কৃত ভাষায় কোটি শব্দটির অর্থ ‘ধরন’। কোটি শব্দটি তাই এখানে সংখ্যাবাচক নয়, ৩৩ ধরনের দেবতা বোঝাচ্ছে ।
দেবী অদিতি কাশ্যপপত্নী। ব্রহ্মার মানসপুত্র ছিলেন ঋষি মারীচী। ঋষি মারীচীর পুত্র ছিলেন কাশ্যপ। কাশ্যপের ১৩ জন স্ত্রী ছিলেন।। তাঁদের মধ্যে অন্যতমা অদিতি আর দিতি। এছাড়া দানু , কদ্রু , সুরভী, বিনতা, তাম্র ১৩ জন স্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম। এঁরাও অদিতির সহদরা।
অন্ধ্রপ্রদেশের কার্নুল জেলায় সঙ্গমেশ্বর মন্দিরে দেবী অদিতি মূর্তি দেখা যে। সেই মূর্তি অবশ্য এখন প্রত্ন সম্পদ হিসেবে আলমপুর জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। কর্ণাটকের নগনাথ মন্দিরেও অদিতি মূর্তি ছিল। সেই মূর্তি বর্তমানে বাদামি মিউজিয়ামে। কেরালায় রক কেভ-এর কাছে দেব অদিতির একটি মন্দির আছে।
হিন্দুদের প্রাচীন বিশ্বাস দেবী অদিতি সকল জীবনের রক্ষাকর্তী। তিনি বিঘ্ননাশিনী। আশা ও আলোর প্রতীক। তাঁর উপাসনা জীব জীবনের অন্ধকার দূর করেন। বন্ধনহীন উন্মুক্ত জীবন পায় মানুষ।