ধনতেরাসে দিন ধনদেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে কুবের দেবতারও পুজো করা হয়। ,ধন-সম্পদের দেবতা কুবেরের আরাধনা করলে আর্থিক সংকট থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
কুবের ধনসম্পদের দেবতা। তিনি ধনসম্পদ রক্ষাও করেন।তিনি যক্ষপতি, যক্ষদের রাজা। দশদিকের অধীশ্বরও তিনিই।
কুবের বিশ্রভা ও ইলাবিলার সন্তান। ইলাবিলার পুত্র হওয়ার জন্য কুবেরের অপর নাম ঐলবিল। পিতা বিশ্রবার নাম হতে এঁর নাম হয় বৈশ্রবণ। কুবেরের তিন পা ও আটটি দাঁত ছিল। কুৎসিত দশর্নের জন্য তাঁর নাম হয় কুবের।
একবার মহাবনে গিয়ে দু হাজার বছর ধরে তপস্যা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করেন। কুবের ছিলেন যক্ষপতি। তাঁর কঠোর কৃচ্ছ সাধনে ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে দেবতাদের সমান মর্যাদার এক পুষ্পক রথ প্রদান করেন। কুবেরের কোনও থাকার জায়গা ছিল না। তিনি ব্রহ্মার কাছে দেব মর্যাদা পেলেও যক্ষ, মানে অপদেবতা; তাই দেবতাদের সঙ্গে অবস্থান করতে পারেন না, আবার অপদেবতার সঙ্গেও এক রাজ্যে অধিষ্ঠান করতে পারেন না। ব্রহ্মা কুবের পিতাকে তাঁর জন্য পৃথক বাস নির্মাণের অনুরোধ করেন।
বিশ্রবা বিশ্বকর্মা কর্তৃক নির্মিত ত্রিকূটশিখরস্থ লঙ্কাপুরীতে পুত্র কুবেরের বাসস্থান স্থির করে দেন। রাবণ লঙ্কাপুরী দখল করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে, পিতার উপদেশে লঙ্কা পরিত্যাগ করে কৈলাস গমন করেন।
কুবের লঙ্কায় একবার রুদ্রাণীকে দর্শন করেন। তার ফলে কুবেরে ডান চোখ পুড়ে যায় ও বাম চোখ পিঙ্গলবর্ণ ধারণ করে। সেই থেকে ধনের দেবতা একপিঙ্গল নামে খ্যাত হন।
কৈলাসে ফের শিবের সাধনায় মগ্ন হন কুবের। বহু বছরের সাধনায় মহাদেব সন্তুষ্ট করে তাঁর কৃপা পান। মহাদেবের সঙ্গে সখ্য হয় তাঁর। সেই থেকে কুবেরের আর এক নাম হয় ত্র্যাম্বকসখা। কুবেরের স্ত্রীর নাম ছিল আহুতি। আহুতির গর্ভে তাঁর দুই পুত্র ও এক কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিল। দুই পুত্রের নাম ছিল- নলকুবর ও মণিগ্রীব। কন্যার নাম ছিল- মীনাক্ষী। কুবের সপরিবারে কৈলাসে থাকতেন। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল অলকা।
রাবণ মহাশক্তিশালী ও অত্যাচারী হয়ে উঠলে, কুবের দূত মুখে রাবণকে দুষ্কর্ম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে রাবণ ক্ষুব্ধ হয়ে কুবেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধে দশাননের কাছে কুবেরের পরাজয় ঘটে। রাবণ তাঁর পুষ্পক রথটি দখল করে নেন।
রাবণ বধের জন্য রামকে সহায়তার জন্য ব্রহ্মা বিভিন্ন দেব, গন্ধর্ব, যক্ষ প্রমুখদেরকে বানর সৃষ্টি করার আদেশ করেন। এই সূত্রে কুবের একটি বানর সৃষ্টি করেন। যক্ষদেবের বানর পুত্র গন্ধমাদন।
ধনতেরাস আর শারদ পূর্ণিমা এই দুই তিথিতে কুবের দেবের পুজো হয়। শারদ পূর্ণিমা দিনটি কুবের দেবতার জন্মতিথি হিসেবে পালিত হয়।
মধ্যপ্রদেশে ধপেশ্বর মহাদেব মন্দিরে ভগবান শিবের সঙ্গে তাঁর বন্ধু কুবেরও পূজিত হন। গুজরাটে নর্মদা তীরে আছে কুবের ভান্ডারি মন্দির। অনেকে বলেন ২৫০০ বছর আগে মহাদেব স্বয়ং এই মন্দির নির্মাণ করেন।কুবের ভান্ডারি মন্দিরে প্রতিবছর ভান্ডারা অনুষ্ঠিত হয়, এই অনুষ্ঠান পৃথিবী বিখ্যাত।