ঘটনা ১
সালটা ২০১৬। মুম্বই- এর রাস্তা। দিনের ব্যস্ত শহরে অটো রিকাশায় দুই কিশোরী। হঠাৎ ছিটকে এল এক বাইক আরোহী। বুলেট গতিতে। একেবারে ঠিক তাদের পাশে। প্রকাশ্য দিবালোকে যুবকের আচরনে স্তম্ভিত হয়ে যায় কিশোরী দুটি। সেই যুবককে বিশেষ কিছু বলার বা চিৎকারের সুযোগ পায়নি তারা। কিন্তু হাতে ধরা মোবাইল আর মগজ কথা বলে ওঠে। যুবকের অভব্যতার ছবি তুলে নেয়। ছিল গাড়ির নাম্বারটিও।
সঙ্গে সঙ্গে মুম্বই পুলিশের টুইট হ্যান্ডেলে ঘটনার বিবরণসহ যুবকের ছবি পোস্ট করে দেয় তারা। শ্রীঘরে যায় সেই যুবক।
ঘটনা ২
এই মাসের শুরুতেই মুম্বইয়ের এক মহিলা তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে অশ্লীল মেসেজ পাচ্ছিলেন। তাঁকে থ্রেট দেওয়া হচ্ছিল ব্যক্তিগত ছবি পাঠানোর জন্য। রাজী না হলে তাঁর ছবি ফটোশপ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি আসছিল।
ভয়-লজ্জা-অপমানে কাউকে বলতে পারছিলেন না ঘটনার কথা। শেষ পর্যন্ত মুম্বই পুলিশের পেজে টুইট করেন।
মহিলার কথায়, ‘ঘটনাটি জানাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর এলাকার থানা থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এক মহিলা সাব-ইন্সপেক্টর তাঁর সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। এফআইআর করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপরাধী ধরা পড়ে।’
মুম্বই পুলিশের টুইট হ্যান্ডেলে সমস্যার কথা জানিয়ে সমাধান পেয়েছেন এমন অনেকেই। ২০১৫ সালে মুম্বই পুলিশের টুইট হ্যান্ডেলটি চালু হয়। তখন থেকেই জনপ্রিয়। শুধু সমস্যার কথা নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তুলতেও বেশ সক্রিয়।
গোটা বিষয়ের নেপথ্যে যিনি আছেন, তিনি ‘টুইটার ম্যাডাম’। সাঞ্চিকা পান্ডে। বছর ৩৭ এর সাঞ্চিকাকে মুম্বই চেনে এখন ‘টুইটার ম্যাডাম’ নামে।
জন্ম রাঁচিতে। জার্নালিজমের ছাত্রী। প্রথম মুম্বই আসেন ২০০৪ সালে। স্থানীয় একটি নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন। আমির খানের ‘সত্যমেব জয়তে’ শো- এ সিনিয়র ফিল্ড রিপোর্টার ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্রাইম জার্নালিস্ট।
২০১৫ তে বেঙ্গালুরু পুলিশের টুইট হ্যান্ডেলে হঠাৎ চোখ আটকায়। পুলিশ-প্রশাসন আর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব থাকে সেই দুরুত্ব ভেঙে মানুষের কাছাকাছি আসার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া খুব শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। সাধারণ মানুষের বোঝার মতো ভাষায় নিরাপত্তা ও অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করে তোলা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের এই উদ্যোগ ভাল লাগে তাঁর।
মুম্বই পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের বিষয়টি জানান সাঞ্চিকা । শুধু মাত্র ‘পুলিশ ফোর্স’ ইমেজে আটকে থাকা নয়, সাধারণ মানুষের কাছে ‘পুলিশ সার্ভিস’ ইমেজ গড়ে তোলা দরকার। ‘ কমিউনিকেশন’ই তার প্রথম ধাপ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কীভাবে যোগাযোগ করা যায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে সে নিয়ে ট্রেনিং-ও দেওয়া হয় মুম্বই পুলিনশের কনস্টেবল এবং অফিসারদের। এই ট্রেনিং দেন সাঞ্চিকা এবং তাঁর টিম।
এই মুহূর্তে মুম্বই পুলিশের টুইট হ্যান্ডেলে ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন।
শুধু মাত্র সিরিয়াস পোস্ট নয়, মিম, জোকসও পোস্ট করা হয়। উদ্দ্যেশ্য একটাই সাধারণ মানুষকে সামাজিক বিষয়গুলি নিয়ে সচেতন করে তোলা। এ ধরনের পোস্ট মানুষকে আরও বেশি করে আগ্রহী করে তুলেছে।
পুলিশ ফোর্সের হ্যান্ডেলে গুরু গম্ভীর ভাবের সঙ্গে সহজ মজা পুলিশ সম্পর্কে প্রচলিত ধারনা একটু হলেও বদলেছে, তা বলাই যায়। এ প্রসঙ্গে সাঞ্চিকা বলেন, ‘পুলিশ কী ‘কুল’ হতে পারে না? তারা কী জোকস এ হাসতে পারে না? সাধারণ মানুষের মতোই তাঁদের জীবন। তাঁরাও খেলা দেখে, সিনেমা দেখে, কোনও না কোনও সেলিব্রিটির ফ্যান হয়।’
সাঞ্চিকা্র মতে, প্রত্যেক শহরেই সাধারণ মানুষের সম্পর্কে বিশদে না জানলে তাদের সঙ্গে কমিউনিকেট করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে তাদের ভাষা। তারা যে ভাষায় মেসেজ পাঠাচ্ছে ,সেই ভাষা জানতে হবে পুলিশ প্রশাসনে যুক্ত ব্যক্তিদের।