হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান কেদারনাথ। ভারতের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গে ও চারধাম তীর্থভূমির মধ্যে অন্যতম। উত্তর ভারতের রাজ্য উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছে কেদার নাথ মন্দির। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস আদি শঙ্কর এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন।
মহাভারতেও এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে। কথায় আছে, মহাদেবকে তুষ্ট করতে পান্ডবরা এই এলাকাতেই তপস্যা করেছিলেন। তাঁরা জেনেছিলেন ষাঁড়ের ছদ্মবেশে লুকিয়ে রয়েছেন মহাদেব। কেদারনাথে বৃষের পিঠের কুঁজকেই জ্যোতির্লিঙ্গ হিসাবেই পুজো করা হয়। শিবের পূজা করা হয়ে এই পবিত্র মন্দিরে। এই এলাকার প্রাচীন নাম ছিল কেদারখন্ড।
প্রাচীনকালে এই এলাকার রাজা ছিলেন কেদার আর এই কেদারখন্ডের অধিপতি হলেন মহাদেব। তাই শিবের পূজা করা হয় এই স্থানে। অনেকের মতে কেদারনাথের আদি মন্দির স্থাপিত হয় পান্ডবদের দ্বারা। বর্তমান মন্দির নির্মাণ করেন আদি শঙ্করাচার্য। ভক্তরা প্রত্যেক বছর মহাদেবের দেখা পাওয়া জন্য ভিড় জমান কেদারনাথ মন্দিরে। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত কেদারনাথ শহরে মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত এই শিব মন্দির।
উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলার অবস্থিত এই তীর্থস্থানকে ঘিরে রেখেছে হিমালয়ের বরফে ঢাকা পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত কেদারনাথ মন্দিরে যাওয়ার কোনও পাকা রাস্তা নেই। গৌরীকুন্ড থেকে ১৪ কিমি দুর্গম পাহাড়ি পথে হেঁটে মন্দিরে পৌঁছতে হয়। তবে পায়ে হেঁটে না যেতে চাইলে ঘোড়ার পিঠেও উপরে ওঠা যায়। প্রথমে গৌরীকুন্ড থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার পথ ধরে ভীমবলি পৌঁছতে হবে। তারপর সেখান থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লিঞ্চোলি যেতে হবে। এবার এখান থেকে কেদারনাথ মন্দিরের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার।
মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গের আকার ত্রিকোণাকৃতি। এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলি নিয়ে আসা হয়ে উখিমঠে। সেখানে টানা ছয় মাস ঐ মূর্তিগুলির পূজা করা হয়। এই সময় মন্দির বন্ধ করে ঐ অঞ্চল থেকে সবাই নীচে নেমে আসেন। শিবের মূর্তি পালকিতে করে নীচে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়। এই প্রথার নাম 'ডোলিযাত্রা'। ২০১৩ সালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ক্ষতিগ্ৰস্থ হয়েছিল কেদারনাথ মন্দির। এই বিপর্যয়ের ফলে মন্দিরে যাওয়ার পথ ক্ষতিগ্ৰস্থ হয়েছিল, তবে আঁচড় লাগেনি কেদারনাথ মন্দিরের গায়ে। মূর্তিও অক্ষত।
যদিও ২০১৬ সালের পর আবার নতুন ভাবে সেজে উঠেছিল কেদারনাথ মন্দির। দর্শকদের জন্য মন্দিরের প্রবেশ দ্বার খুলে দেওয়া হয়। বিপর্যয়ের স্মৃতি ভুলে ফের ভক্তদের শিবনামে মুখর হয়ে ওঠে কেদার।