বৃন্দাবন থেকে জয়পুরে আনা হয়েছিল গোবিন্দ জী'র মূর্তি

জয়পুরের শাসকদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ভগবান গোবিন্দ দেবজী। গোবিন্দ দেবজীর মূর্তিটি জয়পুরে এসেছিল বৃন্দাবন থেকে। প্রায় ৪৫০ বছর আগে বৃন্দাবনের গোমা টিলা থেকে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর শিষ্য শ্রীলা রূপ গোস্বামী খনন করার পর ভগবানের মূর্তি পেয়েছিলেন। ভক্তদের বিশ্বাস, প্রায় ৫৫০০ বছর আগে শ্রীকৃষ্ণের বংশধর বজ্রনাভ এই মূর্তির নিমার্ণ করিয়েছিলেন। বৃন্দাবনেই একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। একসময় ঐ মন্দিরটির অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর আমেরের তৎকালীন মহারাজা সওয়াই মান সিং মোঘল সম্রাট আকবরের সহায়তায়  ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে বৃন্দাবনে একটি বিশাল মন্দির তৈরি করেছিলেন। মন্দিরটি তৈরি করতে ব্যবহৃত লাল বেলেপাথরটি আকবর দান করেছিলেন। যা আগ্রার দুর্গ নির্মাণে ব্যবহার করা হত। মন্দির নির্মাণের সময় সম্রাট প্রায় ১৩৫ একর জমি গবাদি পশু এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

১৭ শতকের মাঝামাঝি সময় মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে বৃন্দাবনের মন্দিরটিকে ভেঙ্গে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই মন্দিরের মূর্তিগুলিকে সংরক্ষণ করে বৃন্দাবন থেকে গোবিন্দপুরায় স্থানান্তর করেছিলেন শ্রী শিব রাম গোস্বামী। বৃন্দাবনের সেই মন্দিরটি আজও রয়েছে।

তবে সেই সময় আমেরের তৎকালীন শাসক মহারাজা সওয়াই জয় সিং মূর্তিটির সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিল ও আমেরের মন্দিরে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৭১৪ সালে এই মন্দিরের নাম কনক বৃন্দাবন দেওয়া হয়। তবে ১৭৩৫ সালে মূর্তিটিকে জয়পুরে আনা হয়েছিল। কথায় আছে, মহারাজ সওয়াই জয় সিংকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন ভগবান গোবিন্দ দেব জী। জয়পুরে আনার পর তার মূর্তিটিকে সুরজ মহলে স্থাপন করা হয়েছিল। সুরজ মহলে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে সরাসরি গোবিন্দজীর মূর্তিটিকে দেখা যায়। বর্তমান সময় এই সুরজ মহলই গোবিন্দজী মন্দির নামে প্রসিদ্ধ।

গোবিন্দজী মন্দির সম্পূর্ণ বেলেপাথর ও মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু সোনার ব্যবহার করা হয়েছে। মন্দির ভবনের স্থাপত্যে রাজস্থানী, মুসলিম এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ঐতিহ্য লক্ষ্য করা যায়। যেহেতু এটি একটি রাজকীয় বাসভবনের পাশে নির্মিত হয়েছিল, তাই ভবনের সিলিংয়ে ঝাড়বাতি এবং দেওয়ালগুলি চিত্রকর্ম দ্বারা সজ্জিত ছিল। মন্দিরটি একটি উদ্যান দ্বারা বেষ্টিত। নাম 'তালকাতোরা'। মন্দিরে সারা বছরই ভক্তদের ভিড় দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু জন্মাষ্টমীর সময় ভগবান গোবিন্দজীকে গয়না ও সুন্দর পোশাক দিয়ে সাজানো হয়। ভগবানের এই অপূর্ব রূপ দেখতে আসাই যেতে পারে এখানে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রশস্ত একক স্প্যান আরসিসি ফ্ল্যাট  ছাদ রয়েছে এই মন্দিরে। যে কারণে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছে এই গোবিন্দ জী মন্দির।

গ্ৰীষ্মকালে প্রত্যেক দিন সকাল ৪ঃ৩০ থেকে ১২টা পর্যন্ত ও বিকাল ৫ঃ৪৫ থেকে ৯ঃ৩০ পর্যন্ত। আর শীতকালে ভোর ৫ঃ০০ থেকে ১২ঃ১৫ ও বিকাল ৫ঃ০০ থেকে ৮ঃ৪৫ পর্যন্ত ভক্তদের জন্য খোলা থাকে মন্দির।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...