১৯১২ সামার অলিম্পিক। স্টকহম। আমেরিকার ওয়াল্টার উইয়ানস পেডিয়ামের ওপর। উচ্ছ্বসিত জনতা। হাততালির ঢেউ। ইতিমধ্যেই দুটো পদক অয়াল্টারের দখলে।
১৯০৮- এর লন্ডন গেমসে শার্প শুটিং-এ সোনা জিতে ছিলেন। ১৯১২ তে ব্রোন্জ। কিন্তু স্টকহমে তিনি যে সোনাটা জিতলেন সেটা কোনও অ্যাথলিট ইভেন্টের জন্য নয়। সোনা পেলেন একখন্ড ব্রোঞ্জের রথের জন্য। ২০ ইঞ্চি লম্বা একটা রথ। সেই রথ টেনে নিয়ে যাচ্ছে দুটো ঘোড়া। তাঁর শিল্প কর্ম ‘ অ্যা অ্যামেরিকান ট্রটার’ ভাস্কর্যের জন্য প্রথম পুরস্কার হিসেবে সোনা জিতে নিলেন এই অ্যাথলিট।
অলিম্পিক গেমস শুরুর প্রথম চার দশক চিত্রশিল্প, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সঙ্গীত এবং সাহিত্যে কৃতিত্বের জন্য সোনা, রূপো এবং ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হত। ১৯১২-১৯৫২ টানা শিল্প চর্চার জন্য পদক দেওয়া হয়েছে। ১৫১ টি পদক দেওয়া হয়েছিল। তার পর বন্ধ হয়ে যায়।
অলিম্পিকের মঞ্চে শিল্প চর্চার জন্য পদক প্রদানের তথ্য সামনে আসার পর অনেকেই চমকে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার তথ্যের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সুইজারল্যান্ডে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির আর্কাইভে যদিও এ ব্যাপারে কোনও তথ্য দিতে পারেনি শুরুতে। হাজার এক ফাইল ঘেঁটেও মেলেনি সূত্র।
রিচার্ড স্ট্যানন নামে এক গবেষক সম্প্রতি অলিম্পিক ঘিরে এমন চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি একটি বইও লিখেছেন অলিম্পিক ইতিহাসের অনালোকিত এই দিকটি নিয়ে।
ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা পিয়ের দু কিউবিতঁর দৃষ্টিতে শিল্প এবং ক্রীড়া ছিল অভিন্ন। একজন প্রকৃত অলিম্পিক ক্রীড়াবিস সমস্ত কলাতেই নৈপুণ্য দেখাতে পারবে এই ছিল তাঁর মত। তাই অলিম্পিককে নিছক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে সংগঠিত করার বদলে শিল্পের নানা দিককে যুক্ত করেছিলেন। প্রাচীন গ্রীসে শিল্প প্রদর্শনী আর ক্রীড়া প্রদর্শনীর মধ্যে তফাৎ করা হয়নি।
তবে এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে বেশ বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত ১৯১২ সালে অলিম্পিকের পদক তালিকায় শিল্পচর্চার জন্য আলাদা পদক ধার্য্য করাতে সক্ষম হন তিনি।
প্রথমবার ৩৩ জন ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রথম পুরস্কার পান আমেরিকার ওয়াল্টার উইয়ানস।তিনি আধুনিক স্টেডিয়াম তৈরীর পরিকল্পনার জন্য রূপোজয়ী হয়েছিলেন। পিয়ের দু কিউবিতঁর নিজেও পদক জয়ীদের তালিকায় ছিলেন।
কিন্তু পরবর্তী বছর গুলিতে এই উদ্যোগ কিছুটা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে এবং ক্রমশ বৈচিত্র্য হারায়। ১৯৩৬ নাগাদ উৎসাহের অভাবে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। অলিম্পিক আবার শুধুমাত্র ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবেই আয়োজিত হতে থাকে। ক্রীড়াবিদ ‘ইমেজে’ পাছে আঁচড় লাগে এই ভাবনা থেকে অনেক ক্রীড়াবিদদেরই শিল্পের ব্যাপারে যথেষ্ট নৈপুন্য থাকা সত্ত্বেও তাঁরা তা প্রকাশ করতে চাইতেন না।
১৯৪০-১৯৪৪ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কারণে অলিম্পিক বন্ধ থাকার পর যখন আবার নতুন করে শুরু হল তখন ব্যয় বাহুল্যের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় শিল্প সম্মান। তৎকালীন কমিটির সদস্যরা অলিম্পকের প্রধান এবং মূল বিষয় ক্রীড়াকেই দিতে চেয়েছিলেন।