চাওয়ালা যখন লেখক

চোখে স্বপ্ন থাকলে তা পূরণ করার জন্য মানুষ কতোদূরেই না যেতে পারে। প্যাশন এমন একটা জিনিস যা সাধারণ স্বল্পশিক্ষিত একজন চা বিক্রেতাকেও লেখক বানিয়ে দিতে পারে। এরকম একজন মানুষের গল্পই শোনাবো আজ সকলকে। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা লক্ষণ রাও। ষাটোর্দ্ধ লক্ষণবাবু আর কেউ নন। তিনি দিল্লীর আইটিও-হিন্দি ভবনের পাশে বসা একজন চা বিক্রেতা। না, শুধু চা বিক্রেতা বলা ভুল। তিনি একজন অসাধারণ লেখক। ইতিমধ্যেই ২৫টি বই লিখে ফেলেছেন তিনি। চা বিক্রির পাশাপাশি সময় পেলেই তিনি লেখেন। দুপুর তিনটে থেকে রাত ন'টা পর্যন্ত খোলা থাকে তার চায়ের দোকান আর তার সাথেই পাল্লা দিয়ে চলে লেখালেখির কাজ।

 

তিনি জানালেন, সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি দেখতেন বাইরে থেকে পড়াশোনা করে ঘরে ফেরা ছেলেরা নানা বই সাথে নিয়ে ফিরছে। সেই দেখে তারও ইচ্ছে হয় সেই বইগুলি পড়ার। প্রথম প্রথম তিনি ছাত্রদের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়লেও পরে তিনি নিজেই কিনে নিতে শুরু করেন সেইসব বই। তিনি জানান, সেইসময় গুলশন নন্দের লেখা উপন্যাসই অধিকাংশ মানুষ পড়তেন। সেই সময় মাত্র ১ টাকা, দেড় টাকা কিংবা তিন টাকার বিনিময়ে পাওয়া যেত সেইসব উপন্যাস। তিনি জানালেন, গুলশন নন্দের লেখা উপন্যাসগুলি থেকেই লেখার প্রতি তার অনুপ্রেরণা জন্মায়। লিখতে শুরু করেন তিনি। তিনি জানান, স্বল্প শিক্ষিত হওয়ার কারণে তিনি কোনো বড় চাকরি পাবেননা তা তিনি আগে থেকেই জানতেন। তাই সংসার চালানোর জন্য ঠিক করেন চা বিক্রি শুরু করবেন।দশম শ্রেণী পাস্ করার পরেই তিনি চলে আসেন দিল্লীতে। সেখানে এসেও তিনি চালিয়ে যান তার লেখার কাজ। প্রথমদিকে মহারাষ্ট্রী ভাষায় লিখতে শুরু করলে তাকে সকলে প্রশ্ন করেন, এতো কম পড়াশোনা করে তিনি কিভাবে তিনি লিখবেন? তিনি জানান, এরপরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দেবেন। ৩৭ বছর বয়সে তিনি পাস করেন উচ্চ মাধ্যমিক। এরপরে আর পিছন ফিরে তাকাননি।ধীরে ধীরে ৫০ বছর বয়সে বি.এ পাস্ করেন তিনি। এরপরে ৬৩ বছর বয়সে এম.এ ও পাস্ করেন লক্ষণবাবু।পড়াশোনা শেষ করে তিনি হিন্দি ভাষাতে লেখালেখির কাজে আবারো মনোনিবেশ করে থাকেন।এরপর শুরু হয় প্রকাশকের দরজায় দরজায় ঘোরা। অনেক স্ট্রাগল করার পর অবশেষে ছাপা হয় তার বই। তিনি জানান, শেক্সপিয়ারের বইগুলির কভারের আদলে তিনি নিজের বইগুলির কভারের রং রাখেন সাদাকালো।মাত্র ৩০০ টাকার বিনিময়ে জনসাধারণের হাতে তিনি তুলে দেন সেইসব বই।তিনি জানান, তিনটি বই কিনলে ৫০০ টাকা নেন তিনি। তিনি  জানান, তার বই যে শুধু তার কাছেই পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন নামিদামি অনলাইন শপিং সাইটেও পাওয়া যায় তার বই। অনেকেই তাকে প্রশ্ন করেন এতো কমদামে কেন তিনি বই বিক্রি করেন? তার উত্তরে তিনি জানান, সকলের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই তিনি লেখেন।দাম নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই তার।তিনি জানান, কাজ যদি পছন্দের হয় তার জন্য অনায়াসেই সময় বের করে নেওয়া যায়। তার কথাটি যে কতটা সত্যি তা প্রমান করেন তিনি নিজেই। তিনি জানান, তিনি বর্তমানে গান্ধীজি কে নিয়ে লিখছেন।মানুষের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলাই এই মুহূর্তে তার একমাত্র উদ্দেশ্য

 

দিল্লীতে থাকেন অথচ এনাকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুস্কর। যারা তাকে চেনেন তাদের অধিকাংশ মানুষই তাকে ডাকেন 'লেখকজি' বলে।তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফ থেকেও তার এই কাজের প্রশংসা করা হয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...