তখন কলকাতা সবে টেলিভিশন চিনতে শিখছে। ঘরে ঘরে টেলিভিশন অনেক দূরের ব্যাপার। পাড়ায় যার বাড়িতে টেলিভিশন আছে তার বাড়িতে ভেঙে পড়ে পাড়া। ঘর-দালান তো বটেই দরজা জানলাও বাদ যায় না।
সেবার ভেঙে পড়েছিল পাড়া। দিকে দিকে খবর রটে গিয়েছিল ‘পেলে আসছে’। সে এক কী সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার! পেলে যেন এক রূপকথার মানুষ। যে কোনওভাবে একবার অন্তত দেখা পাওয়া চাই তার। যেখানে যার টিভির সন্ধান জানা আছে সে খবর ডেকে ডেকে বলা একে অপরকে। তখন বাড়ির টেলিফোনও দূর দূরান্তের ব্যাপার। মধ্যবিত্ত বাড়িতে দেখা মেলে না তার। সিনেমার পর্দায় দেখা মেলে।
প্রজেক্টার অনেক দূরের ব্যাপার। চাঁদা তুলে টিভি কেনা হয়েছিল অনেক জায়গায়। গৃহস্থ বাড়িতেও এসেছিল নতুন টিভি।
পেলের কথা উঠলে স্মৃতি হাতড়ায় কলকাতা। কী হয়েছিল তখন। স্মৃতি শোনা গেল হাওড়ার শিবপুরের মালা রায়ের মুখে। ৭৭-এ তিনি কলেজ ছাত্রী। বাড়ির পাশেই বয়েজ স্কুল। বাড়ির ছাদ থেকে দেখা যায় স্কুলের কমন রুম। সেই কমন রুমে এসেছিল টেলিভিশন সেট। খেলা চলছিল ইডেন গার্ডেন্সে। মাঠে নামলেন পেলে। সে কী উত্তেজনা! পেলেকে দেখার উত্তেজনা একা দেখা নয়, ভাগ করে নিয়েছিলেন চেনা-জানাদের সঙ্গেও। ছাদ থেকে পেলে দর্শনের সাক্ষী হয়েছিল আরও অনেকে।
১৯৭৭ সালে প্রথম কলকাতায় আসেন। পেলের কসমস বনাম মোহনবাগান ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ইডেন গার্ডেন্সে। কসমস ক্লাবের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন পেলে। মোহনবাগানের প্লেয়ার তালিকায় সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার, প্রদীপ চৌধুরী প্রমুখের নাম। মোহন বাগানের কোচ পিকে। সেদিন পেলেকে দেখতে গ্যালারিতে ভেঙে পড়েছিল শহর। শুধু মাথা আর মাথা। তিনদিন ধরে চলা বৃষ্টিকেও পরোয়া নেই। মাঠে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সে নিয়ে সমস্যা কম হয়নি। ড্র হয়েছিল কমমস-মোহনবাগান ম্যাচ। ফুটবলের মক্কা পাগল হয়েছিল পেলের জন্য।
দ্বিতীয়বার এসেছিলেন ২০১৫তে। সেবার স্মৃতি অন্যরকম। তখন পেলে পঁচাত্তরে। শরীরও ভেঙেছে। তবু একবার ফিরে দেখতে চেয়েছিলেন ইডেন গার্ডেন্সটা!