সন্ধ্যেবেলা চায়ের আড্ডাটা খুব ভালো জমে উঠেছে। চায়ের সাথে টায়ের মিশেলে সন্ধ্যেটা পুরো জমজমাট। কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করলেন আড্ডায় উপস্থিত সকলের তুলনায় আপনাকেই সবচেয়ে বেশি মশা কামড়াচ্ছে। আচ্ছা বাকিদের তো এতো মশা কামড়াচ্ছে না। মশারা এতো লোকের মাঝখান থেকে কেন একটা লোককেই বেছে নিলো? কি স্বার্থ আছে তার? তাহলে কি আপনার রক্ত মিষ্টি হয়ে গেলো? মশাদের খাবারের অনুকূল হয়ে গেলো আপনার রক্ত নাকি বাকিদের রক্ত তেতো হয়ে গেলো? এরকম হলে চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক। সবাইকে ছেড়ে মশারা কেন আপনার উপরেই হামলা করলো বলুন তো?
প্রথমত, মশারা কিছু মানুষকে বিশেষভাবে পছন্দ করে থাকে। কিছু মানুষের রক্তে উপস্থিত রাসায়নিক মশাদের বেশি আকৃষ্ট করে থাকে। যেমন, ত্বকে যদি ল্যাকটিক অ্যাসিডের আধিক্য থাকে তাহলে মশারা বেশি আকৃষ্ট হয়। এই নিয়ে গবেষণা আজকের নয়। বহুযুগ আগে থেকেই এই নিয়ে গবেষণা চলে আসছে। এই গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এমন তথ্য যা নাড়া দিয়েছিলো গোটা বিশ্বকে। সেই গবেষণায় জানা গেছিলো, ও ব্লাডগ্রুপ রয়েছে যেসব মানুষের, তাদের নাকি অন্য ব্লাড গ্রুপ যুক্ত মানুষের তুলনায় বেশি মশা কামড়ায়। বুঝুন ঠেলা!
প্রতিটি মানুষের জিনই জানান দেয় তার রক্তের বিভিন্নতা এবং তার মধ্যে মিশ্রিত থাকা রাসায়নিকের কথা। জেনেটিক্স থেকে এই ব্যাপারে আরও অনেক তথ্য জানা গেছে। যেমন জানা গেছে, মানুষের শরীরের বেসাল মেটাবলিক রেট এর সঙ্গে মশার কামড়ানোর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেরকমই একজন মানুষের শরীর থেকে ঠিক কতটা পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে তাও ঠিক করে দেয় আপনাকে কত মশা কামড়াবে। কার্বন ডাই অক্সাইডকে মশারা তেতো টার্গেট খুঁজতে কাজে লাগিয়ে থাকে।
গর্ভবতী মহিলা এবং অত্যধিক ওজনযুক্ত মানুষদের ক্ষেত্রে রেস্টিং মেটাবলিক রেট খুব বেশি হয়। এর ফলে এইসব মানুষরা মশার জন্য খুবই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। অ্যালকোহোল পান করার ফলে মেটাবলিক রেটের উত্থান ঘটে। সেই সময় মশা অধিক পরিমানে আপনার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। কার্বন ডাই অক্সাইড বা এই জাতীয় কোনো রাসায়নিকের সাহায্যে মশারা তাদের টার্গেট চুজ করে থাকে। হাওয়া বাতাস চলাকালীন মশারা বেশি উপরের দিকে উঠতে পারে না। সামান্য হাওয়া দিলেও মশাদের উড়তে সমস্যা হয়ে থেকে। তাই মশা বিশেষ করে মাটির কাছাকাছি অঞ্চলে ঘোরাফেরা করে থাকে। সেই সময় অন্ধকারে যদি আপনি বেশি নড়াচড়া করেন তাহলে তা পরোক্ষ ভাবে মশাদের কামড়ানোর জন্য নিমন্ত্রণ করে আনা হয়। কারণ অন্ধকারে মাটিতে যে ছায়ার সৃষ্টি হয় তা অন্ধকারে থাকা মানুষটির রঙের থেকে বেশি গাঢ় হয়ে থাকে। তাই সেই সময় নড়াচড়া করলে অন্ধকারে মশাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না যে তাদের টার্গেট এখন কতদূরে রয়েছে।
তাই সন্ধ্যের আড্ডায় বা ফ্যামিলি প্রোগ্রামে অন্যদের তুলনায় যদি আপনাকে মশা কামড়ায় তাহলে জানবেন এতে চিন্তার কিছু নেই। শরীরে রাসায়নিকের ভারসাম্যের জন্যই মূলত মশারা আপনার কাছে বেশি আসছে। আজকাল খুব বেশি পরিমানে যে রোগ হচ্ছে তা হল মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগ গরম একটু বাড়ার সাথে সাথেই বেশ জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে। তাই এই সময় মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকুন। মশা সবচেয়ে বেশি কামরায় মূলত সন্ধ্যে হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে। সেই সময় যদি ফুল হাতা জামা পরা যায় তাহলে মশার হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যায়। এইভাবেই মশার হাত থেকে বেঁচে থাকুন। আর তা সম্ভব না হলে, বাজারে প্রাপ্ত মশা নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করুন।