“কলকাত্তে কা জো জিকর কিয়া তুনে হামনশি, ইক তির মেরে সিনে মে মারা কে হায় হায়!”
দেড় হাজার মাইল রাস্তা পেরিয়ে যে শহরে এসেছিলেন সেখানে ছিলেন মাত্র দেড় বছর।
পুরনো দিল্লির ভরা মেহফিল আর শায়েরির ছেড়ে অচেনা শহর কলকাতায় মির্জা আসাদউল্লাহ বেগ। সন ১৮২৮-এর ২০ ফেব্রুয়ারী। মতান্তরে ১৮২৬। উঠেছিলেন উত্তর কলকাতার শিমলা পাড়াতে। ১৩৩ নম্বরের এক হাভেলিতে থাকতেন। বাড়িওয়ালা মির্জা আলি সওদাগর আর বিলায়েত হুসেনের কাছে ৬ আর ১০ টাকা ভাড়া দিতেন মাসে।
‘সফর-এ-কলকাতা’-তে লিখেও ছিলেন কলকাতার কথা। পুরনো দিল্লির রূপ-রস-গন্ধের সঙ্গে বিশেষ মিল ছিল না কলকাতার এই অঞ্চলের। তবু তিনি মিশে গিয়েছিলেন।
তবে লেখার প্রয়োজন বা নিছক ভ্রমণের খেয়ালে উর্দু কবি কলকাতায় আসেননি। তাঁকে শহরে আসতে হয়েছিল পেটের টানে।
দিল্লির নবাবের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর প্রিয় কবি। কিছুটা সেই সূত্রেই ইংরেজদের রোষে পড়তে হয়েছিল। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে তাঁর পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
লাট বাহাদুরের কাছে আর্জি ছিল পেনশন চালু করার জন্য। পেনশন ছিল গালিবের পিতামহের জায়গিরের চলে যাওয়ার কারণে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ।
কলকাতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজধানী। তাই পেনশন সংক্রান্ত ঝামেলা মেটাবার জন্য তাঁকে রাজধানী শহরেই ছুটে আসতে হয়েছিল। লর্ড আর্মহাস্টের কাছে।
শুধু কলকাতায় নয়, পেনশনের জটিলতা কাটাতে তাঁকে যেতে হয়েছিল মুর্শিদাবাদেও । তারও আগে ফিরোজপুর, ভারতপুর, কানপুর। সব জায়গাতে বিফল হয়ে শেষ পর্যন্ত তিলোত্তমা।
ভালোবেসে ফেলেছিলেন শহরটাকে। তবে কলকাতায় তাঁর স্মৃতি পুরোটাই মধুর নয়। এই শহর তাঁকে জীবনের কঠিন যুদ্ধে সেভাবে আলোদেখাতে পারেনি। পেনশন তিনি উদ্ধার করতে পারেননি । উপরন্তু শহরের এক মুশায়েরাতে ভাষা নিয়ে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছিল উর্দু ভাষার অন্যতম সেরা কবিকে। তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছিল।
খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল শহর থেকে। ‘চলে যাওয়া সময়ে’র মতোই আর তিনি কখনও এ শহরে ফেরেননি। শহরও ভুলেছে তাঁকে। শুধু রাস্তার ফলকে এক নাম হয়ে থেকে গিয়েছেন তিনি।