"আমার জন্য সইলে তুমি অশেষ ব্যাথা, বুঝিয়ে দিলে মা হওয়া নয় মুখের কথা" মা হওয়া যে মুখের কথা নয় সেটা সন্তান মাত্রই অনুভব করতে পারে কিন্তু একজন বাবারও কি কৃতিত্ব কিছু কম থাকে একজন সন্তানের বেড়ে ওঠার পিছনে, অবশ্যই থাকে, কিন্তু মা হওয়ার যন্ত্রনা অর্থাৎ সন্তান প্রসবের যন্ত্রনা ঠিক কতটা কষ্টকর তা কি একজন পুরুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব? পুরাণ বলে একজন পুরুষ কিন্তু প্রসব যন্ত্রনা ভোগ করেছিল, জানেন তার নাম কি?
সূর্য্য বংশীয় রাজা যুবনাশ্ব।পুরাণ জানায় রাজা যুবনাশ্ব ছিলেন অপুত্রক, সন্তান কামনা করে তিনি আশ্রমের ঋষিদের সাথে সাধনা করতে থাকেন, ঋষিরা যুবনাশ্ব এর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তার সন্তান উৎপাদনের জন্য যজ্ঞারম্ভ করেন, যজ্ঞ শেষ হয় মধ্যরাতে, ঋষিরা একটি কলস ভর্তি মন্ত্রপূতঃ জল রেখে যান, এবং ঠিক করেন যে সেই জল যুবনাশ্ব এর স্ত্রীকে পান করার কথা জানাবেন, যা পান করলে তিনি সন্তানধারণ করতে পারবেন। রাত্রিকালে রাজা যুবনাশ্ব তৃষ্ণার্ত হয়ে সেই মন্ত্রপূতঃ জল ভুল করে নিজেই পান করে ফেললেন। ঋষিরা জেগে উঠে দেখলেন কলস শূন্য, জলহীন।
ঋষিরা যুবনাশ্ব এর কাছ থেকে কলসের জলশূন্য হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে যুবনাশ্ব তাদের কাছে সব স্বীকার করে নেন, ঋষিরা তাঁকে জানান যে তারই সন্তান কামনায় সেই মন্ত্রপূতঃ জল রাখা হয়েছিল তাই যুবনাশ্বকেই এই সন্তান প্রসব করতে হবে কিন্তু তাঁকে গর্ভধরণের কষ্ট সহ্য করতে হবেনা। পুরো একশত বছর পর যুবনাশ্ব এর উদরের বামদিক ভেদ করে জন্ম নেয় পুত্র মান্ধাতা, আমরা কথায় কথায় মান্ধাতার আমল বলিনা ? ইনিই হলেন সেই মান্ধাতা। তা যুবনাশ্ব সন্তানের জন্মতো দিলেন কিন্তু মাতৃদুগ্ধ ছাড়া একজন সন্তান বাঁচবে কি করে? যুবনাশ্ব পড়লেন মহা বিপদে। বিপদত্তারণ হয়ে এগিয়ে এলেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র, পুরাণ বলে ইন্দ্রের হাতের আঙ্গুল মধুক্ষরা, ইন্দ্র বললেন "ধাস্যতি মাময়ং" অর্থাৎ এই সন্তান আমাকে ধারণ করেই বেঁচে থাকবে, শিশু মান্ধাতা দেবরাজের আঙ্গুল মুখে নিয়ে জীবনধারণ করলেন। ভাবলেই আশ্চর্য লাগে আজকের ইন্টারনেট আর সোশ্যাল নেটওয়ার্ক-এর ব্যস্ততার যুগে যখন আমরা শুনি কোনো জাপানি পুরুষ গর্ভধারণ করেছেন বা য়ুরোপের কোনো সমকামী পুরুষ সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা চিন্তা করছেন আমরা অবাক হয়ে যাই অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় দুহাজার বছর আগে ভারতবর্ষের ঋষিরা এইরকম একটা ভাবনার কল্পনা করেছিলেন।