আজ মায়েদের দিন। তাঁদের কোনও সিএল নেই, কোনও সিক লিভ নেই, অ্যানুয়াল লিভ নেই। তাঁরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করেন থুড়ি ইট, বালি, পাথরের বিল্ডিংকে হোম অর্থাৎ ঘর বানান তাঁরাই। সোশ্যাল দেওয়ালে এখন হ্যাসট্যাগে মাদার্স ডে পোস্টের বন্যা। মা-সন্তানের ভালবাসা কী জাহিরের জিনিস নাকি নিভৃতযাপনই তাঁর ধর্ম? আমাদের না বলা কথাও যিনি বুঝে যান, তিনিই তো মা। দেবী দুর্গাকে ফুল দিয়ে অঞ্জলি দেই, আজ না হয় একটা সেলফিতেই অঞ্জলি হোক। সঙ্গে থাকুক শক্ত আলিঙ্গণ।
স্বাধীনতা দিবসে, 'আমরা কী সত্যিই স্বাধীন?' প্রশ্ন তোলার মতো মায়েদের ভালবাসা জানানোর কি কেবল একটিই দিন? সে'প্রশ্ন করতে এ লেখা নয়! মা দুর্গাকে নিয়ে আমরা চারদিন মেতে উঠি, তা-বলে কি বছরের বাকি দিনে দুর্গাপুজোর কথা মনে পড়ে না? পুজোর প্ল্যান করি না? যেকোনও কিছু উদযাপনের জন্য একটি উপলক্ষ্য দরকার। কাউকে কাউকে কুর্নিশ জানানোর জন্য একটি দিনের দরকার, তেমনই মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মায়েদের দিন হয়ে থাক না!
কিন্তু প্রশ্ন একটাই সেলফির আড়ালে ভালবাসা ঢাকা না পড়ে যাবে না তো? আজও এ'দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মায়ের জাতদের সন্তান উৎপাদনের মাধ্যম ব্যাতিত কিছুই ভাবা হয় না। সমাজ এগোচ্ছে কিন্তু মালগাড়ির কামড়ার মতো ঢিমে তালে বহু বদ্ধমূল ধ্যান-ধারনা ছুটে যাচ্ছে। পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে, সেই মায়েদের ছেলে-মেয়েদেরই। একটা দীর্ঘ পোস্ট করে মা-সন্তানের ভালবাসার রসায়নের চেয়ে ঢের বেশি জরুরি, সমাজ মাধ্যম পেরিয়ে মায়েদের পাশে দাঁড়ানো। সামাজিক আচার, রীতি-নীতি, নিয়ম, লোকলজ্জা, লোকাচারের যাঁতাকলে যে মায়েরা রোজ পেষাই হচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বৃদ্ধাবাসে পরিণত হওয়া এ'দেশের মহানগরগুলোর তারুণ্যের প্রয়োজন। সুদূর কোনও শীতের দেশে বসে পাঁচ বছরের আগের ফ্যামিলি ফটো শেয়ার করে নয়, এ দিন সময় কাটাতে হবে মায়ের সঙ্গে। মাম্মি, মম, আম্মি, আম্মা, মা সব থাকুক, অটুট হয়ে থাকুক মা-ছায়ের সম্পর্ক। ভিডিও কলের দূরত্ব ঘুঁচে যাক এই পৃথিবীর সব মা-ব্যাটা-বেটিদের মধ্যে।