পিঠে ডানা। হাতে ফুল। চাঁদনি রাতে আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে সে। দিনের প্রথম আলোয় চোখ ফেরানো যায় না এমন তার সৌন্দর্য! মাঝরাতে ঘুমঢাকা শহরেও একা জাগে কলকাতার কালো পরী।
শ্বেতপাথরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিশাল আকার সৌধের প্রধান হলের ঠিক মাথায় রয়েছে একটা গম্বুজ আর গম্বুজের বাইরের দিকে একটা পারা বা মার্কারি দিয়ে ভরা ব্রোঞ্জের গ্লোব। গ্লোবের উপর দাঁড়িয়ে আছে প্রায় সাড়ে ছয় টন ওজনের ব্রোঞ্জের তৈরি এক নারী। বাঁ হাতে ধরা লম্বা বাঁশি। ডান হাতে একগুচ্ছ ফুল, পেছনে দুই ডানা। একটু জোরে হাওয়া দিলেই সে ঘুরে যেত। কিন্তু এখন সে স্থির।
রানি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিকে সম্মান জানাতে ভিক্টোরিয়া স্মৃতি সৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লর্ড কার্জন। তখনকার দিনে ওই স্মৃতিসৌধ নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা। জর্জ ম্যানসিনি নামের এক শিল্পী প্রায় সাড়ে ছয় টনের এই ব্রোঞ্জ মূর্তিটি গড়েছিলেন। ইংল্যান্ডের শেলটেন্যাম থেকে ১৯২০ সালে কলকাতায় এসেছিল। ভিক্টোরিয়ার চূড়ায় সে বসে ১৯২১ সালে।
ভিক্টোরিয়ার কালো পরী নিয়ে রটেছিল নানা গুজব। এই শহরে তখন চেনা লবজ ছিল ‘এঞ্জেল ইস ওয়াচিং ইউ’। মানে ওই পরী নাকি ব্রিটিশদের চর। ২০০ ফুট উঁটু থেকে চারিদিক ঘুরে কলকাতাবাসীদের উপর নজর রাখছে।
ভিক্টোরিয়াকে ব্জ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে কালো পরী। পরীর শরীরের মধ্যে বজ্রনিরোধক দণ্ডটি প্রবেশ করানো আছে। তাই বাজের প্রভাব পড়ে না সৌধে।
কালো পরী কেন আর ঘোরে না এক সময় এ নিয়ে চর্চা কম হয়নি। আসলে ঘুরতে ভুলে যায়নি পরী। যান্ত্রিক ত্রুটির শিকারও হয়নি। পরীকে ঘোরাতে পারে তেমন হাওয়া ঠিক আর কলকাতায় বয় না। কারণ এই পরীকে ঘোরাতে হলে হাওয়ার গতি অন্তত ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার হওয়া দরকার। ভিক্টোরিয়ার ‘বায়োডেটা অব দি এঞ্জেল’ নামে ওই পরি সংক্রান্ত ভিক্টোরিয়ার পুরনো নথি বলছে, ১৯২১ সালে প্রায় সাড়ে ছয় টন ওজনের ওই পরিকে যখন ভিক্টোরিয়ার মাথায় বসানো হয়েছিল, তখন তার ঘুরতে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতির হাওয়া দরকার হত। এখন বহুতল ও প্রাকৃতিক বদলের কারণে এই হার হয়েছে ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার।