ত্যাগের তীর্থ অমরনাথ

দূর্গম বারবার মানুষকে টানে। কখনও নেহাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কখনও তীর্থের টান। বারবার দূর্গমকে জয় করে মানুষ। গোটা দেশে ছড়িয়ে আছে তীর্থস্থান। পর্বত থেকে মরুভূমি সর্বত্র। পদে পদে বিপদ তবু মনের জোরে সে পথ পেরিয়ে যায় তারা। বয়স, দূর্বলতা, অক্ষমতা হেরে যায় সে ই জোরের কাছে। তেমনই এক তীর্থ অমরনাথ।কথায় বলে সব তীর্থ বারবার, অমরনাথ একবার। এতই দূর্গম এবং বিপদসংকুল এই তীর্থ। তবু ভারতবাসী সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে অমরনাথ দর্শনের অভিলাষে।

মানুষের বিশ্বাস অমরনাথের শিব লিঙ্গের দর্শনে সাক্ষাৎ মহাদেবের দর্শন হয়। সেই কারনেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে এই তীর্থে ছুটে আসে মানুষ। অমরনাথ শৈব তীর্থ।  জন্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে ১৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পহেলগাঁও শহরের উপর দিয়ে যেতে হয় যাত্রীদের। গ্রীষ্মকালে খুব স্বল্প সময়ের জন্য এই অমরনাথ প্রবেশের উপযোগী হয়। তখন লক্ষ লক্ষ তীর্থ যাত্রী অমরনাথের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।

amarnath-1

অমরনাথের গুহাতে চুঁইয়ে পড়া জল জমে শিবলিঙ্গের আকার ধারণ করে। এই চুঁইয়ে পড়া জলের ধারা খাড়া ভাবে গুহার মেঝে পড়ার সময় জমে গিয়ে শিব লিঙ্গের আকার ধারণ করে। কখনও কখনও ৮ ফুট উঁচুও হয় এই শিব লিঙ্গ। জুন-জুলাই মাসে শ্রাবণী পূর্ণিমার থেকে শুরু হয় অমরনাথ যাত্রা। শেষ হয় জুলাই-আগস্ট মাসে,  গুরু পূর্ণিমার সময় ছড়ি মিছিলে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অমরনাথ যাত্রায় যোগদান করেন।

কথিত আছে, শিব পার্বতীকে অমরত্ব শিক্ষা প্রদানের জন্য, এই স্থানে নিয়ে এসেছিলেন। শিব তাঁর সমস্ত ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর ষাঁড় নন্দী,  তার শিরের চন্দ্র, বায়ু, অগ্নি, জল, মৃত্তিকা এবং সর্পকুলকে ভিন্ন স্থানে রেখে আসেন অমরনাথ যাত্রা করার আগে। তাই এই তীর্থ ভক্তদের কাছে ত্যাগের তীর্থ।  

আরও একটি কাহিনি প্রচলিত আছে অমরনাথ ঘিরে। মহাদেব পার্বতীকে যখন অমরত্ব সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করছিলেন, তখন সেখানে কোনও প্রাণী ছিল না। শুধুমাত্র দুটি পায়রার ডিম ছিল। সেই ডিম নাকি এখনও দেখতে পাওয়া যায়!

amarnath-2

অমরনাথের গুহায় শিবলিঙ্গ ছাড়া রয়েছে মহামায়া শক্তিপীঠ। সতীর ৫১টি পীঠের অন্যতম এই পীঠ। এখানে সতীর গলা পড়েছিল বলে মনে করা হয়। প্রতি বছর শ্রাবণ পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে অমরনাথ যাত্রা। তারপর চাঁদ যত ছোট হতে থাকে, ততই আকার কমতে থাকে বরফের শিবলিঙ্গ।  

পহেলগাঁও থেকে অমরনাথ যেতে পাঁচ দিন সময় লাগে। অমরনাথে যাওয়ার জন্য আগে প্রত্যেক যাত্রীর রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। শ্রী অমরনাথ শ্রাইন বোর্ড (SASB)  যাত্রা শুরুর মোটামুটি মাসখানেক আগে যাত্রা শুরুর ও শেষের তারিখ ঘোষণা করে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...