হরপার্বতীর উৎসব গাঙ্গোর

শিবকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য পার্বতী একবার কঠোর তপস্যা শুরু করেন। দেবীর তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে শিব মাতা পার্বতীকে দর্শন দিয়ে বর কামনা করতে বলেন। তখন পার্বতী তাঁর প্রার্থনায় শিবকে স্বামীরূপে কামনা করেন। শিব প্রার্থনা মেনে নেন। বিবাহে রাজী হন এবং অখণ্ড সৌভাগ্যবতী হওয়ার বর দান করেন।

শিবের থেকে প্রাপ্ত এই আশীর্বাদ দেবী পার্বতী শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি সকল স্ত্রীলোকের উদ্দেশ্য়ে ছড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, এই বিশেষ দিনটিতে যে সকল নারী শুদ্ধাচারে যথাযথ বিধি মেনে হরপার্বতীর পুজো করবে তারাও সমান সৌভাগ্যবতী হবে। সেই থেকে মহিলাদের মধ্যে গাঙ্গোর ব্রত পালন শুরু হয়।

gangour003

উত্তর ভারত, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাটে গাঙ্গোর পালিত হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চমক দেখা যায় রাজস্থানে।

চৈত্রমাসের শুক্লা তৃতীয়া, গৌরী তৃতীয়া বা গাঙ্গোর ব্রতের দিন নারীরা ষোল শৃঙ্গারে সেজে হলুদ ফুল আর জলে কলস ভরে  শিরে সেই কলস ধারণ করেন। গাঙ্গোরের বিশেষ গান গাইতে গাইতে ঘরমুখী হন তাঁরা। বিবাহিতা, অবিবাহিতা এমনকি বালিকা-কিশোরীরাও এই উৎসবে অংশ নেয়। তারপর হরপার্বতীর মাটির মূর্তি পুজো করেন। মেহেন্দি, কাজল, হলুদ আর নানা রঙিন কাপড় লাগে এই পুজোয়। বিবাহিত জীবন এবং পরিবারের সুখ শান্তি কামনা করেন তাঁরা। এই উৎসবকে বসন্ত এবং কৃষির উৎসবও বলা হয়।

রাজস্থানে গাঙ্গোর উৎসব অত্যন্ত ধুমধাম করে পালন করা হয়। হোলির পর শুরু হয়। চলে টানা ১৮ দিন ধরে। বিশেষ করে উদয়পুরে। বিভিন্ন বয়সী নারীরা জল নিয়ে শোভাযাত্রা করেন। উৎসবের সপ্তম দিনে সন্ধেবেলা অবিবাহিতা নারীদের শোভাযাত্রা বের হয়। মাথায় থাকে গোধূলিয়া নামে মাটির জলপাত্র।

gangou002

গাঙ্গোর মূলত মহিলাদের উৎসব। এই উৎসব উপলক্ষে বিবাহিত কন্যাদের পিত্রালয় থেকে শ্বশুরলয়ে শাড়ী, চুড়ি, গহনা, ফল, মিষ্টি পাঠানো হয়।

গাঙ্গোরের শেষ দিনটি সবচেয়ে জমকালোভাবে পালিত হয়। আলো আর চোখধাঁধানো বাজিতে মেতে ওঠে জয়পুর, যোধপুর, জয়সলমীর, বিকানির। দেশ এবং বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে বহু পর্যটক রাজস্থান আসেন এই উৎসবের টানে।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...