পিতৃপক্ষ-দেবীপক্ষের সন্ধিলগ্ন মহালয়া

প্রতিবছর মহালয়া তিথি এলেই যেন ঘরে এসে পড়ে শারদ উৎসব। ঢাকের আওয়াজ, পুজোর গন্ধ থেকে আর দূরে থাকা যায় না। মহালয়ার এই তিথিতে ভোর থাকতে থাকতেই মানুষ ভিড় করে গঙ্গার ঘাটে। মন্ত্রপাঠ, জলদান আর স্নানে চলে তর্পণ পর্ব। এ দিন দিনতি পিতৃপুরুষকে স্মরণ করার দিন। বংশধরের জলদানে তৃপ্ত হন তাঁরা। 

সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম ‘মহালয়’। তার অমাবস্যা তিথিকে বলা হয় ‘মহালয়া’। ‘মহ পূজায়াম মহ উৎসবে’। মহা শব্দের মানে পূজা, আর এক অর্থ উৎসব। ‘মহঃ আলীয়তে অস্যাম (অমাবস্যাম) ইতি মহালয়া’। বিশেষভাবে মহ তথা পূজা এবং উৎসব এই অমাবস্যাকে অবলম্বন করে অনুষ্ঠিত হয় বলেই এটি মহালয়া অমাবস্যা। 

মহালয়ায় পিতৃপক্ষ বা অপরপক্ষ শেষ হয়। পরদিন থেকে শুর হয় দেবী পক্ষ বা পূর্বপক্ষ। এই পক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে নিত্য বিশেষ তর্পণ এবং মহালয়া অমাবস্যায় পর্বদিন বলে বিশেষ পার্বণ শ্রাদ্ধ অবশ্য কর্তব্য। তিথিতত্ত্বে বলা হয়েছে- ‘মহালয়ে কন্যাগতাপরপক্ষে’। মহালয়ায় পার্বণশ্রাদ্ধ অবশ্য কর্তব্য। যদি কোনও কারনে না হয়, তাহলে দীপান্বিতায় সেটি করতেই হবে।

পিতৃপক্ষ এবং দেবী পক্ষের সন্ধিলগ্ন হল মহালয়া। পিতৃপূজার দ্বারাই দেবীপূজার অধিকার অর্জন করতে হবে। পিতৃপুরুষের তৃপ্তির জন্য যে মন্ত্রপূত জল প্রদান করা হয় তাই হল তর্পণ। পঞ্চ মহাযজ্ঞের অন্যতম পিতৃযজ্ঞ এই তর্পণ্মের মাধ্যমে নিত্য সম্পাদিত হয়। 

শ্রাদ্ধ এবং তর্পণের মন্ত্রে রয়েছে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে যোগযুক্ত হওয়ার আকুতি। প্রথমেই করা হয় তীর্থ-আবাহন। কুরুক্ষেত্র, গয়া, গঙ্গা, প্রভাস, পুষ্কর, প্রভৃতি বিভিন্ন প্রান্তের তীর্থকে আবাহন করে নিখিল ভারতীয় ঐক্য চেতনায় চিত্তকে সমৃদ্ধ করা হয়। 

গঙ্গা-যমুনা-গোদাবরী-সরস্বতী-নর্মদা-সিন্ধু-কাবেরী ভারতের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণের পুণ্যতোয়া নদীগুলিকে আবাহন করা হয়।

শ্রাদ্ধের মন্ত্রে নিজের পিতৃপুরুষের সঙ্গে পিন্ডদান করা হয় সমস্ত অজ্ঞাত কুলশীলদেরও। যে মহাকাল নিত্য লীলা করে চলেছে এই প্রকৃতির বুকে তাঁদেরও প্রণাম জানানো হয় এদিন। 

তর্পণ ও শ্রাদ্ধ পর্ব শেষে উপনিষদের মন্ত্র পাঠ করে এই ধরনী ও প্রকৃতিকে মধুময় রূপে দেখার সংকল্প দেয় তর্পণকারী ব্যক্তি। তিনি বলেন- 

মধুবাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ

মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ।

মধু নক্তম্‌ উতোষসো মধুমৎ পার্থিবং রজঃ

মধুমান্নো বনস্পতির্মধুমাং অস্তু সূর্যঃ।

শুদ্ধ চিত্তে মধুময় ভুবনে দেবী বন্দনায় আত্ম নিবেদন করে মানুষ। এখানেই মহা চরিতার্থতা।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...