যে মানুষ ওই ভাত প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করেন, তাঁর জীবনে কোনোদিন অন্নসংস্থানের অভাব হয় না!

বারোয়ারি থেকে বাড়ির কালীপুজো বহু স্থানে দীপান্বিতা উৎসবের অন্যতম প্রধান অঙ্গ অন্নকূট উৎসব। পাত পেড়ে বসে সবে খাওয়া। প্রাথমিকভাবে এই অন্ন উৎসব সম্পর্কে এই ধারণাই মাথায় এলেও অন্নকূটের মাহাত্ম্য তারও অধিক।

বাঙালীর কাছে অন্নকূট ‘কালী মায়ের ভোগ’। কিন্তু এই উৎসবের প্রধান সংযোগ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে। কথিত আছে, যে মানুষ ওই ভাত প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করেন, তাঁর জীবনে কোনোদিন অন্নসংস্থানের অভাব হয় না।

শাস্ত্র মতে গোবর্ধন পুজোয় অন্নকূটের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এই পুজোয় সামর্থ্য অনুসারে অন্নকূটের ভোগ লাগানো উচিত। কোনও কোনও স্থানে আবার মুগডাল ও বাজরার খিচুড়ির ভোগ নিবেদন করা হয়। কৃষ্ণকে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে অন্নকূট বলা হয়।

IMG-20231111-WA0025

অন্নকূট শব্দের অর্থ কী?

একাধিক অন্ন, শস্যের মিশ্রণই হল অন্নকূট। এই তিথিতে বিভিন্ন ধরনের ভোগ নিবেদন করে কৃষ্ণের পুজো করা হয়। অন্নকূটের প্রসাদ পৃথক পৃথক বিতরণ করা হয় না। বরং সমস্ত প্রসাদ একসঙ্গে মিশিয়ে এই প্রসাদ সকলকে দেওয়া হয়। বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি একটি তরকারি, কড়ি-ভাত, লুচি, রুটি, মুগ ডালের খিচুড়ি, বাজরার হালুয়া এ সময় তৈরি করা হয়।

কলকাতার অনেক মন্দির ও পরিবারে অন্নকূট উৎসব হয়। তার মধ্যে সব থেকে বড় উৎসব হয় বাগবাজারের মদনমোহন মন্দিরে। অন্নকূট উৎসবে ১১৫ রকম রান্না করা পদ ও ১২০ রকম মিষ্টান্ন দেওয়া হয়।

বাগবাজার-কুমোরটুলি এলাকার মদনমোহনতলা অঞ্চলে মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা গোকুলচন্দ্র মিত্র। ১৭৬১তে গোকুলচন্দ্র তাঁর এক বিঘারও বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি বাড়ির দোতলায় কুলদেবতা ‘মদনমোহন’-এর জন্য ‘দরবার কক্ষ’ তৈরি করেন। একতলায় তৈরি হয় ঠাকুরদালান ও নাটমন্দির। কার্তিক মাসের শুক্লা-প্রতিপদ তিথিতে নাটমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় অন্নকূট উৎসব। প্রায় ৪০০ কিলোগ্রাম চালের ভাত-সহ ১৫৭ রকম পদ তৈরি হয়। পুজো শেষে ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয় ওই অন্নভোগ।

IMG-20231111-WA0026

সোনারপুর খড়িগাছি অঞ্চলের ঊনপঞ্চাশ বছরের প্রাচীন কালী শিবগুরু মঠেও অনুষ্ঠিত হয় অন্নকূট উৎসব। উৎসবের দিন  প্রায় আড়াই মণ চালের ভাত দেওয়া হয় ভোগ হিসেবে। চুড়ো করে সাজানো ভাতের গায়ে সব্জি দিয়ে কালীর মুখ আঁকা হয়। সঙ্গে থাকে ১৫৫ রকম নিরামিষ পদ।

রানি রাসমণির কন্যা জগদম্বাদেবী ১৮৭৫-এ ব্যারাকপুর তালপুকুরের অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মন্দিরে অন্নকূট উৎসব হয় অন্নপূর্ণা পুজোর দিনে। ওই দিন সকালে মূল পুজো, কুমারীপুজো ও হোমের পরে হয় অন্নকূট। একুশ কিলোগ্রাম চালের ভাত-সহ ৫১ রকম পদ দেওয়া হয় ভোগ হিসেবে।রান্না করা পদ ও ১২০ রকম মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...