সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি অথবা দুর্গাষ্টমীর মধ্যে যে কোনও একটি ব্রত পালন করলে মহা পুণ্যফল লাভ হয়। তাই জীব মাত্রই উপরিউক্ত তিনটি ব্রতের মধ্যে যে কোনও একটি ব্রত অবশ্যই পালন করা উচিত। অর্থাৎ এই তিন ব্রতই এক সমগোত্রীয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জন্মাষ্টমী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মর্ত্যধামে অবতীর্ণ হওয়ার তিথি,অন্যদিকে শিবরাত্রিও দেবাদিদেব মহাদেব ও পার্বতীর বিবাহ তিথি যা পালন করলে বিশেষ ফলপ্রাপ্ত হওয়া যায় কিন্তু দুর্গাষ্টমী? দুর্গাষ্টমীতে এমন বিশেষ কী ঘটনা ঘটেছিল যে কারণে সনাতন শাস্ত্রে জন্মাষ্টমী এবং শিবরাত্রির সঙ্গে এই দুর্গাষ্টমীর তুলনা করা হয়েছে? তা জানতে গেলে অবশ্যই জানতে হবে দুর্গা পুজোয় সন্ধিক্ষণ কোন মুহুর্তটাকে বলে আর দুর্গা অষ্টমীর মাহাত্ম্য বা তাৎপর্য কী?
প্রতিবছর প্রচুর মানুষ ভক্তিযুক্ত চিত্তে সন্ধিপুজোর উপোস রাখেন। এই বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩রা অক্টোবর সোমবার হলো মহা অষ্টমী আর মহা অষ্টমীর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ তিথি হল সন্ধিক্ষণ। অষ্টমী তিথির শেষ ধাপ এবং নবমী তিথির প্রথম ধাপকে বলা হয় মহা সন্ধিক্ষণ অর্থাৎ অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট হলো দেবী দুর্গার সন্ধি পুজোর সময়।
দুর্গা অষ্টমীর ব্রত সম্পর্কে বলা হয় যে, এই ব্রত প্রতিটি মানুষের অতি অবশ্যই পালন করা উচিত। কারণ এই ব্রত অত্যন্ত পফলদায়ী।
সনাতন শাস্ত্রে বলা হয় ব্রহ্মা যখন বর দিয়েছিলেন মহিষাসুরকে যে ত্রি জগতের কোন পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না তখন নিজেকে চির অবোধ্য ও অমর অক্ষয় ভেবে উল্লাস করতে শুরু করেছিলেন মহিষাসুর। তিনি স্বর্গ, মর্ত্য পাতাল জুড়ে তার তান্ডব লীলা শুরু করেছিলেন, মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সকল দেবতারা স্বর্গ থেকে পালিয়ে ত্রিদেবের শরণাপন্ন হন।
ত্রিদেব তখন যুক্তি করে পরামর্শ দেন যে সকলের শক্তিকে একত্রিত করতে এবং তার মধ্য দিয়েই আদ্যা শক্তি মহামায়ার আবির্ভাব হবে। এরপর সকলের সম্মিলিত শক্তির প্রভাবে আবির্ভূতা হন আদ্যা শক্তি মহামায়া এবং তিনি দশপ্রহরনধারিনী এবং দশ অস্ত্রে সজ্জিতা হয়ে মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্যত হন।
পুরাণ অনুযায়ী দীর্ঘ নয় দিন ও নয় রাত ধরে দেবী দুর্গা ও মহিষাসুরের মধ্যে দীর্ঘ লড়াই হয়েছিল এবং তারপর দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুরমর্দিনী। এই সন্ধিপুজোর সময়ে দেবী দুর্গা রক্তবীজের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন কিন্তু কিছুতেই রক্তবীজকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না কারণ রক্ত বীজের শরীর থেকে এক বিন্দু রক্ত মাটিতে পড়ে নতুন অসুরের জন্ম হচ্ছিল। এরপর অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে দেবী দুর্গার ত্রিনয়ন থেকে মা কালী আবির্ভূতা হোন এবং আবির্ভূত হওয়ার পর মুহুর্তেই দেবী কালি রক্তবীজের শরীরের সকল রক্ত পান করে তার নিধন করেন। সনাতন শাস্ত্রে বলা হয় যে সন্ধিক্ষণে দেবীর অন্তর থেকে সকল স্নেহ মায়া মমতার অবসান হয় তাই সন্ধিপুজো চলার সময় মায়ের দৃষ্টিপথের সম্মুখে কাউকে রাখা উচিত নয়। দেবীর দৃষ্টি পদ পরিষ্কার রাখবার কথা এই সময় বলা হয় এবং সন্ধিপুজোর শেষ ধাপে অর্থাৎ শেষ চব্বিশ মিনিটে বলিদান করা হয়।
এই বলিদান এর ক্ষেত্রে কোথাও ছাগল বলি হয়। কোথাও বা আখ, কলা, চাল কুমড়ো ইত্যাদি বলি হয়। সন্ধি পুজোর তাৎপর্য সম্পর্কে বলা হয় যে, সন্ধিপুজো করলে সারা বছরে দুর্গাপুজোর ফল লাভ হয়। তাই সংযমী চিত্তে যে মানুষ ভক্তি সহকারে নিষ্ঠা যোগে উপবাস করে সন্ধি ব্রত পালন করে সে যম যাতনা থেকে মুক্তি পায়।